নিউজ ডেস্কঃ কোনো ডিগ্রি কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের (এমপি) মনোনয়ন বা নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রায় প্রদানকারী বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ন কবির রায় প্রকাশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একজন সংসদ সদস্যকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অপরদিকে গভর্নিংবডি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সংসদ সদস্যের নিচের পদমর্যাদার। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য যদি গভর্নিংবডির সভাপতি হন তাহলে কার্যত ওই গভর্নিংবডি একটি ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য।
রায়ে আরও বলা হয়, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের এ সংক্রান্ত আগের রায় পর্যালোচনা করে এটা কাঁচের মতো স্পষ্ট যে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বা মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি পদে মনোয়নন দেন। ওই মনোনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম আফজালুল হক।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি ডিগ্রি কলেজের সভাপতি পদে সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন। পরে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল যথাযথ ঘোষণা করেন।
অ্যাডভোকেট হুমায়ন কবির বলেন, ইতোপূর্বে উচ্চ আদালত বেসরকারি স্কুল ও কলেজে (এইচএসসি পর্যন্ত) গভর্নিং বডির সভাপতি পদে জাতীয় সংসদের সদস্যরা থাকতে পারবে না মর্মে রায় দিয়েছেন। এখন থেকে ডিগ্রি কলেজ তার সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদেও সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবেন না।
এর আগে বিগত ২০১৬ সালে (রোববার ৩১ জুলাই) ইচ্ছা পোষণ করে সভাপতি হওয়ার বিধান বাতিল করে সংসদ সদস্যরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকতে পারবেন না, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে হাইকোর্ট। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন রায় প্রদানকারী বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ০১ জুন বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৫ (২) এবং ৫০ ধারাকে বাতিল করে সংক্ষিপ্ত ওই রায় দেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। এরমধ্যে ৫ ধারা হচ্ছে এমপিদের সভাপতি পদ ও ৫০ ধারা হচ্ছে বিশেষ কমিটি গঠন নিয়ে। আদালত দু’টি ধারাই বাতিল ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছেন।
ভিকারুন নিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনায় পরিচালনায় বিশেষ কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও রাশেদ খান মেনন এমপি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫ ও ৫০ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী ড. ইউনুচ আলী আকন্দ ।
রায়ে বলা হয়েছে, ইচ্ছা পোষণ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং গভর্নিং বডির বিশেষ কমিটির বিধান অবৈধ। এর ফলে সংসদ সদস্যরা স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি থাকতে বা হতে পারবেন না।