নিউজ ডেস্ক: ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি’র ঘোষণায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার কথা বলা হলেও সংস্থাটিই বলছে গত ৫ বছর ধরে লাগাতার বাড়ছে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত ও অপুষ্ট মানুষের সংখ্যা।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, যা এর আগের বছরের চেয়ে ১ কোটি বেশি। আর পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৬ কোটি। সোমবার (১৩ জুলাই) জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বিভাগ প্রকাশিত বাৎসরিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
‘২০২০ সালে বিশ্বে খাদ্য ও পুষ্টির অবস্থা: সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য ব্যবস্থাপনার রূপান্তর’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের পূর্বাভাস, করোনা মহামারি আরও বাজে আকার ধারণ করবে এবং এর ফলে চলতি বছর শেষে আরও ১৩ কোটির বেশি মানুষ চরম ক্ষুধার্তের তালিকায় যুক্ত হবে।
জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থার প্রধান যিনি এই প্রতিবেদন তৈরিতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছেন তিনি বলেছেন, পৃথিবী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে পাঁচ বছর পর ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও সব রকম অপুষ্টি দূর হবে। কিন্তু বর্তমানে আমরা যেখানে অবস্থান করছি তাতে ২০৩০ সালের মধ্যেও হয়ত এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপুষ্টির বিচারে আফ্রিকার চেয়েও বাজে অবস্থান এশিয়ার। আফ্রিকায় যেখানে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা ২৫ কোটি তখন এশিয়ায় এই সংখ্যা ৩৮ কোটি ১০ লাখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা ঠিক মোটা দাগে বিশ্বে পুষ্টিহীন ও ক্ষুধার্ত মানুষের শতাংশের হিসাবে খুব বড় পরিবর্তন আসেনি, ৮.৯ শতাংশই আছে। তবে, ২০১৪ সাল থেকে এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
এই যুক্তির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, গত ৫ বছর ধরে বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে ক্ষুধার্তের সংখ্যা। তাই শতাংশের হিসাবে তেমন হেরফের না হলেও সংখ্যার বিচারে বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি, ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে কোভিড-১৯, যা খাদ্যপ্রাপ্তির আশাকে ফেলেছে ঝুঁকিতে আর আরও বড় করে ফেলেছে খাদ্য যোগানের অপ্রতুলতা বা সীমাবদ্ধতাকে।
করোনা মহামারি ঠেকাতে কার্যকর করা লকডাউনের পুরোপুরি প্রভাব হিসাবের সময় এখনও আসেনি উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলছে, করোনা যে বৈশ্বিক মন্দা সৃষ্টি করল তাতে ২০২০ সাল শেষে কম করে হলেও ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে ক্ষুধার্তের তালিকায় যুক্ত হবে। এই সংখ্যা ১৩ কোটি ২০ লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব নয়, এমন সন্দেহে শেষ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ।
ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা দূর করতে সুষম খাবার গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে পারবে উপযুক্ত কৃষিনীতি, সামাজিক সুরক্ষা ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। আর এটা করতে পারলে বছরব্যাপী স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা শতশত কোটি ডলার রক্ষা করা সম্ভব হবে।