• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

করোনা ভাবনা। প্রসঙ্গঃ ১০ টাকা কেজির চাল কালিমা লিপ্ত হতে পারেনা। -অ্যাডভোকেট আবু মহী উদ্দীন

সাংবাদিকের নাম / ৪৬ জন দেখেছেন
আপডেট : বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০

করোনা দুর্যোগে জনস্বার্থে মানুষকে বাঁচানোর জন্য লকডাউন করা হয়েছে। সকল কর্মজীবি মানুষ হঠাৎ করেই অনেকটা বাধ্যতামুলক গৃহবন্দিত্ব বরণ করেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদে আছে যারা দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। কাজের বুয়ারা কাজে যেতে পারছেনা। ভয়ে কেউ তাদের কাজে লাগাচ্ছেনা। কিছু পরিবার আছে যাদের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাত্র ১জন। তবে নিয়মিত খাবার চালিয়ে নেওয়ার মতো আয় করে। তাদের কাজ বন্ধ । ইতোমধ্যে দেশের বিত্তশালী , আধাবিত্তশালী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন , উদারমনা ব্যক্তি, রাজনীতিবীদ , মতলববাজ , অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি , এমনকি ছাত্ররা টিফিনের টাকায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা জমি বিক্রি করে , ছাত্রলীগ নেতা মায়ের গহনা বিক্রি করে খাবার নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের তো অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। সবাই সাধ্যমতো এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে কেউ ছবি তুলে নিজেদের জাহির করেছে। কেই ১০ প্যাকেট দিয়ে ২০০ প্যাকেটের নিউজ করেছে। অনেকে আবার এমন পরিবারকে সহায়তা করেছে , কে করেছে কেউ জানেনা। প্রাপক দাতাকে দেখেনি , এর মধ্যে কেউ কেউ আবার শপিং ব্যাগে নিজ কোম্পানী , দল বা ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের প্রচারমুলক ব্যাখ্যা দিয়েছে। এটা প্রচার করার আগ্রহেই হয়েছে। অনেকে লজ্জায় ¤্রয়িমান হয়েছে। অনেকে ছবি তুলতে রাজী না হলে তাকে ত্রান দেওয়া হয়নি। কেউ আবার ত্রান হাতে দিয়ে ছবি তুলে ত্রান ফেরত নিয়েছে। বিচিত্র সহায়তার ধরণ। সামাজিকতা বা ধর্ম কোন মাধ্যমেই এই বিষয়গুলি গ্রহণযোগ্য নয়। এর মধ্যে ১টা শ্রেনি থাকে যারা লাজ শরমের বালাই রাখেনা । একটা শ্রেনি অভ্যস্থ ত্রান সংগ্রহ করতে। তারা ত্রান সংগ্রহ করে বেড়ায়। ঠান্ডার সময় ১০/১২ টা করে শীত বস্ত্র যোগাড় করার তথ্যও আছে। এর কারন যারা ত্রান দেয় তাদের বিবেচনায় তারাই সবচেয়ে গরীব। তারাই বেশি উপকৃত হয়। আবার এক শ্রেনি আছে তারা লাইনে দাঁড়াতে পারেনা , হাত পাততে পারেনা , কাউকে বলতে পারেনা। তাদের কোন উপায় থাকেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদের বিষয় বিবেচনায় জোর দিয়েছেন।
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারের অনেকগুলো কর্মসুচি আছে। ভিজিডি , টিআর, জিআর , বয়স্ক ভাতা , প্রতিবন্ধি ভাতা , সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন সহায়তা কর্মসুচি রয়েছে। আবার বিভিন্ন ধর্মীয় পর্ব উপলক্ষে প্রশাসন , জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা করা হয়। আবার বন্যা ,খরায় জরুরী সহায়তা তো আছেই।
আমাদের দুর্ভাগ্য দেশের সাধারণ মানুষের অনেক খবর মন্ত্রী মহোদয়রা জানেনা অথচ প্রধানমন্ত্রী জানেন। কদিন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স করছেন। লক্ষনীয় বিষয় হলো তিনি বিভিন্ন জেলায় খুটে খুটে এমন ভাবে জানার চেষ্টা করছেন, তিনি ঘটনার নাড়ী নক্ষত্রের খোজ খবর রাখেন। অন্যেরা কোন বিষয় ভাবার আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই হয়তো সম্ভব হয়। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আকাঙ্খা , চাওয়া পাওয়া ,স্বপ্ন সাধনা ছিল বাঙলার সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। আমাদের দুর্ভাগ্য , তিনি বাঙ্গালী বড্ড বিশ্বাস করতেন। এই শ্বিাসই তার কাল হলো। আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারিনি। দেশের কোন সাধারণ মানুষ তাকে হত্যা করেনি। প্রতিশোধ নিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। জালা মিটিয়েছে পরাজয়ের। সে অভাবটি পুরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী যিনি মেধা এবং শ্রমের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। হয়েছেন বিশ্ব বরেণ্য নেতা। ব্যাঙ্গোক্তির তলাবিহীন ঝুড়ির দেশকে তুলে দিয়েছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে দেশের দায়িত্ব দিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তার মন্ত্রী পরিষদ বা আমলারা সে গতিতে এগুতে পারছেনা। এর মধ্যে সাবোটাজও যে নাই সে কথাও বলা যাবেনা। কয়েকজন মন্ত্রীর দক্ষতা পারদর্শীতা আজ গভীর প্রশ্নের মুখোমুখি। তাদের জন্য সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।

করোনা দুর্যোগে দেশের মানুষকে লকডাউনে খাদ্য সহায়তা করার জন্য ১০ টাকা কেজি দামে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করলেন । সারা দেশে কি দুর্ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। ফেস বুকের কল্যানে চালচুরির ঘটনা ফুলে ফেপে উদ্বেগ জনক পর্যায়ে পৌঁছানোর খবরে এটা বন্ধ করে দিতে হলো। অবশ্য একারণেই বন্ধ করা হয়েছে তা নয় । এই চাল বিতরণে সোসাল ডিসট্যান্সিং কোন ভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছেনা সেটাই বড় কারণ । না হলে ১০ টাকার চাল বিতরণ পদ্ধতি ঢেলে সাজালে বা সেনা বাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করলে সে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু জনপ্রতিনিধিধের কাজতো সেনাবাহিনী দিয়ে হবেনা। ইমার্জেন্সি মিট আপ করা যেতে পারে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘটনাটা বোধ হয় অন্য জায়গায়। ২/১ জায়গায় ত্রানের চাল লুঠ হলো, ঠাকুরগাাঁওয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গ্রামবাসীকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করানো হলো। যে ভাবেই বলা হোক না কেন খাদ্য সমস্যা আছে তবে ত্রান লুঠ বা রাস্তা ঘেরাও পর্যায়ের সময় এখনো আসেনি। প্রতিপক্ষ যাতে সাবোটাজ করতে না পারে সে দিকে কড়া নজরদারী রাখতে হবে। খাদ্য সহায়তার অতীত সকল রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। জেলা প্রশাসক , ইউ এন ও , পুলিশ কর্মীরা মোবাইল দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। খাবার বাড়ী পৌঁছে দিয়েছে। সাহায্য প্রার্থীর মোবাইল নম্বরে প্রাপককে না পেয়ে আবার ফেসবুকে জানতে চেয়েছে এই ৩ টি নম্বরে লোক পাওয়া যায়নি। তাদের খাদ্যের প্রয়োজন হলে যেন যোগাযোগ করে। ১৯৭৪ সালে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে লঙ্গর খানা খোলা হয়েছিল। অনেক বিত্তবান সে সময় এগিয়ে এসেছিলেন। ছাত্র সংগঠনগুলো রুটি তৈরি করে বিতরণ করেছে। আমি নিজেও লঙ্গরখানা পরিচালনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। তখনতো ফেসবুক ছিলনা। সে সময় স্বাধীনতা বিরোধীরা অনেক অপপ্রচার করছে। সে সময় আওয়ামী লীগ , কমিউনিষ্ট পার্টি , ন্যাপের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লঙ্গরখানার আটা চুরির তেমন ঘটনা ঘটতে পারেনি। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা বিরোধীরা বা অথর্ব বিরোধী দল মাঠে কোন আন্দোলন করার ক্ষমতা না রাখলেও তারা যে চুপ করে থাকবে আর তলে তলে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করবেনা এ কথা যিনি বিশ্বাস করবেন তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন বলে ধরে নেওয়া যায়। তারা এ সুযোগ হাত ছাড়া করবেনা। তবে চাল চুরির ঘটনা বা রটনা একেবারে অমুলক নয় এটা ঠিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কাউকে ছাড়া হবেনা। দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় আস্থা রেখেছে। তারা এখন রেজাল্ট দেখতে চায়। এই সব ছোটখাট কাজতো স্থানীয় আওয়ামী লীগের। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ বা নির্দেশনা দিতে হয় এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তাহলে কমিটি গঠনের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হয়নি। কিছু আবর্জনা ঢুকে পরেছে।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ ১৫ টিভিকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তিনি সাক্ষাতকারে কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। যতদুর জানি আব্দুল মান্নান বগুড়ার ত্যাগী আওয়ামী লীগারদের একজন। তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষন করে বিষয়গুলি অনুধাবন ও পর্যালোচনা করে আমলে নেওয়া দরকার। আওয়ামী লীগ প্রধান ব্যবস্থা নিলে বোধহয় দলটা বাঁচে। যেমন ছিলেন জয়পুরহাটের আব্বাছ আলী মন্ডল। আওয়ামী লীগের সকল দূর্দিনে তিনি দল চালিয়েছেন। তিনি অকাতরে নিজের অর্থ ব্যয় করেছেন। কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়। তার সাথে কাজ করেছি। এখন তার বয়স হয়েছে। তবে আমার ধারনা নুতন আওয়ামী লীগার যারা তারা হয়তো আব্বাছ আলী মন্ডলকে তেমন চেনেনা। তার কাছে তেমন কেউ গিয়ে পরামর্শ নেয় একথা তেমন জানা যায়না।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বলেছেন চাউল চোরদের রক্ষা নাই। কথাটার বাস্তবায়ন দেখতে দেশের মানুষ অপেক্ষমান। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। আমরা আশাবাদী। আমাদের প্রস্তাব , তদন্ত , চার্জশীট ,মামলা , ফাইনাল রিপোর্ট , এসব মামলায় স্বাক্ষী পাওয়া যায়না। ততদিনে স্বাক্ষী ম্যানেজ হয়ে যেতে পারে। তদন্তকারী বদল হবে বা ম্যানেজ হতে পারে। শেষে নির্দোষ প্রমান হয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে মিছিল করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর দেশবাসী জানবে। এসব সময় সাপেক্ষ ব্যপার। দেশের মানুষ আপনার কাছে চায় সামারী ট্রায়াল। মোবাইল কোর্ট। যে পরিমান চাল চুরি করেছে তার ১০০ গুন জরিমানা , ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড , তাকে যে সহযোগিতা করেছ তাদেরও জেল ও জরিমানা , আর যারা তাকে আওয়ামী লীগের মতো স্বাধীনতা সংঘ্রামের , মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে জায়গা করে দিয়েছে তাকে সহ এদের সবাইকে আজীবনের জন্য বহিস্কার এবং অন্য দলও যাতে তাকে না নেয় তার জন্য বিবৃতি দেওয়া। তার বাড়ীতে এটা সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া যে এই বাড়ীতে চাল চোর আছে। দেশের মানুষের আকাংখা এই রকম। দেশে খাদ্য আছে। হাজারা মানুষ এগিয়ে এসেছে কর্মহীন মানুষদের খাওয়ানোর জন্য। বিত্তবান , বিত্তহীনরা এগিয়ে এসেছে ,আরো আসবে। বিভিন্ন সংগঠন ব্যক্তিগতভাবে নিজেরা টাকা জড়ো করে খাবার কিনে মানুষের বাড়ীতে পৌছে দিচ্ছে। রাজনীতিবীদ , স্বেচ্ছাসেবক, প্রশাসন , পুলিশ সদস্যরা অনন্য ভুমিকা পালন করছে। সেখানে মাত্র কয়েকজন লোভী লোকের জন্য এতবড়ো কর্মযজ্ঞে কালিমা লেপানো হবে তা হতে পারেনা। খাদ্য বিতরণের একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করে তার আওতায় বিতরণ করলে এই ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ সহজ হবে বলে আমি মনে করি। আগের একটি লেখায় আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম। সর্বজনগ্রাহ্য চাহিদা ভিত্তিক একটি উৎকৃষ্ট তালিকা করা হবে। এই তালিকায় কার কি ধরণের সহায়তা লাগবে তার ডাটাবেজ থাকবে। কার্ড থাকবে। খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট সময়মতো পৌঁছে যাবে। আর অন্যেরা সহযোগিতা করতে চাইলে জেলা প্রশাসনের কাছে টাকা জমা দিবে। জেলা প্রশাসন তাদের পক্ষে খাদ্য সহায়তা দিবে। কেউ যদি নাম প্রচার করার ইচ্ছা করে তাহলে তাদের প্রতিষ্ঠানের নামটি প্যাকেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। যাতে প্রাপকই জানতে পারে এই সহায়তা কার কাছ থেকে এসেছে। জেলা প্রশাসন প্যাকেট করলে কেউ পেতেই থাকবে আর কেউ পাবেনা সেটি ঘটবেনা। প্রতিটি এলাকার জন্য একজন করে ট্যাগ অফিসার থাকবে। সেখানে ১টি সর্বদলীয় কমিটি থাকবে । জনপ্রতিনিধি , আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য , প্রশাসনিক কর্মকর্তা , স্বেচ্ছাসেবকরা ভালো ভুমিকা রাখতে পারবে। জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। খাবার নিশ্চয়তা পেলে লোকজনকে বাড়ীতে রাখা সহজ হবে। এরই মধ্যে পরীক্ষা জোরদার করে যারা আক্রান্ত নয় তাদের জন্য সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়াতে হবে। অর্থনীতির চাকাওতো সচল করতে হবে।


এধরনের আরও সংবাদ

Editor: Ataur Rahman
News editor : Joherul Islam
email: newsnat24@gmail.com
Phone: 01717253362, 01744367842
N.C Road, Thakurgaon.