নিউজ ডেস্ক: নয়াদিল্লির জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ক্যাম্পাসে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর মুখোশধারীদের ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দায় সরব ভারতের শোবিজ তারকারা। নজিরবিহীন এ হামলার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন জাবেদ আখতার, শাবানা আজমী থেকে শুরু করে হালের সেনসেশন রিতেশ দেশমুখ, সোনম কাপুর, তাপসী পান্নু, কৃতী শ্যাননরা। প্রতিবাদের মিছিলে আছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহানের মতো তারকারাও।
গত রোববার (৫ জানুয়ারি) একদল মুখোশধারী জেএনইউর বিভিন্ন হোস্টেলে ঢুকে লাঠি, রড, হকিস্টিক ও হাতুড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্দয়ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। ভাঙচুর চালায় নির্বিচারে। এতে আহত হন ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষসহ প্রায় ৪০ শিক্ষার্থী। বিস্ময়করভাবে ওই ঘটনার জন্য উল্টো ঐশী ঘোষসহ আহত ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দিল্লি পুলিশ। এ হামলার জন্য ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জোট শরিক কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস’র ছাত্র শাখা এবিভিপিকে দায়ী করা হচ্ছে।
হামলার ঘটনার রাতেই সোনম কাপুর তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে হামলাকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কাপুরুষোচিত এই হামলায় স্তম্ভিত-বিমর্ষ। এতই যদি সাহস থাকে, তবে নিরীহ লোকজনের ওপর হামলার সময় নিজেদের মুখটা দেখাও!’
আহতদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বিদ্রুপ করে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও কবি জাবেদ আখতার টুইটার বার্তায় বলেন, ‘জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতির বিরুদ্ধে এফআইআর (প্রাথমিক অভিযোগ) দায়ের পুরোপুরি স্পষ্ট। তার কী সাহস, সে তার মাথা পেতে একটি জাতীয়তাবাদী-দেশপ্রেমী লোহার রডকে থামাতে চায়! এই দেশবিরোধীরা আমাদের নিরীহ লাঠিগুলোকে একটু পড়তেও দেয় না, সবসময় লাঠিগুলোর সামনে নিজেদের শরীর পেতে দেয়। আমি বুঝি, তারা আঘাত পেতে ভালোবাসে!’
নন্দিত অভিনেত্রী শাবানা আজমী তার টুইটারে বলেন, ‘বলার ভাষা নেই। শুধু প্রতিবাদই যথেষ্ট নয়। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
রিতেশ দেশমুখ তার টুইটারে লেখেন, ‘মুখ কেন ঢাকতে হয়? কারণ তারা জানে, যা করছে তা ভুল, আইনবিরুদ্ধ এবং অপরাধযোগ্য। এ অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।’
শক্তিমান অভিনেতা রাজকুমার রাও ঘটনাটিকে লজ্জাজনক ও ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে তার টুইটারে লেখেন, ‘যা হয়েছে তা লজ্জাজনক, হৃদয়বিদারক এবং ভয়ঙ্কর। যারা এই কাজ করেছে তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
জাতীয় বিষয়ে সবসময় সোচ্চার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাপসী পান্নু তার টুইটারে বলেন, ‘কী হচ্ছে এসব! দুঃখজনক।’
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘হীরক রাজার সেনারা একের পর এক পাঠশালা আক্রমণ করে যাবে, মগজ ধোলাই মেশিন চলছে, চলবে … উদয়ন মাস্টার, কোথায় আপনি? আর লুকিয়ে থাকবেন না! আপনাকে, গুপি, আর বাঘাকে খুব দরকার!’
আর কতদিন এসব চলবে প্রশ্ন তুলে দিয়া মির্জা লেখেন, ‘কতদিন অন্ধ হয়ে বসে থাকবেন? রাজনীতি এবং ধর্মের নামে আর কতদিন এই হানাহানি চলবে? যথেষ্ট হয়েছে।’
হামলার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন অপর্ণা সেন, অনুরাগ কাশ্যপ, বিশাল দাদলানী, অনুরাগ বসু, সৃজিত মুখার্জি, স্বস্তিকা মুখার্জি, অনুপম রায়, স্বরা ভাস্কর, রিচা চাড্ডা, কঙ্কণা সেনশর্মা, জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘সাবধান ইন্ডিয়া’র উপস্থাপক ও অভিনেতা সুশান্ত সিং, আবীর চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহানের মতো তারকারাও। এদের মধ্যে রাস্তায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দেখা গেছে অনুরাগ, বিশাল দাদলানী ও সুশান্ত সিংদের। কলকাতার রাস্তা কাঁপিয়েছেন টলিউডের এ প্রজন্মের মুখ ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন, উজান গঙ্গোপাধ্যায়রা।
বেতন বৃদ্ধিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলন থামাতেই মৌলবাদী সংগঠন এবিভিপির নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।