নিউজ ডেস্ক: ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে দুটি রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বাগদাদের গ্রিন জোনে মার্কিন দূতাবাসের কাছে আঘাত করেছে দুটি মর্টারের গোলা। কারা এ রকেট নিক্ষেপ বা গোলাবর্ষণ করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি জানায়, বাগদাদের উত্তরের আল-বালাদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে কাতিউশা রকেট নিক্ষেপ করে এ হামলা চালানো হয়েছে। ওই ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
তবে রকেট হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়নি। এ ধরনের রকেট দিয়ে এর আগেও বহুবার মার্কিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি দূতাবাস লক্ষ্য করেও একাধিকবার এ ধরনের রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে, যেগুলো দূতাবাসের অদূরে এসে পড়েছে।
এদিকে বিমানঘাঁটিতে রকেট হামলার কাছাকাছি সময়ে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের কাছে গ্রিন জোনে (পশ্চিমা দেশগুলোর ঘোষিত কথিত আন্তর্জাতিক জোন) দুটি মর্টারের গোলা এসে পড়ে। তৎক্ষণাৎ বেজে ওঠে সাইরেন। সে সময় দূতাবাসে থাকা কূটনীতিক ও সেনাদের কিছুটা চিন্তিত দেখা যায়।
গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান বাহিনী একপাক্ষিক হামলা চালিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের অভিজাত শাখা কুদস্ বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
বিক্ষোভে টালমাটাল ইরাকে এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে। গত ২৭ ডিসেম্বর ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের (হাশদ আল-শাবি) শাখা কাতায়েব হিজবুল্লাহ’র রকেট হামলায় মার্কিন এক ঠিকাদার নিহত হন। তার দু’দিন পর যুক্তরাষ্ট্র আল-শাবির ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ২৫ জনকে হত্যা করে।
এর প্রতিবাদে আল-শাবির সদস্যরা মিছিল নিয়ে বাগদাদের গ্রিন জোনে ঢুকে মার্কিন দূতবাসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারপর শুক্রবার ভোরে বাগদাদ বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলেইমানি ও আল-শাবির উপ-প্রধানসহ আটজনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
কাসেম সোলেইমানি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সবচেয়ে আস্থাভাজন ছিলেন। দেশের সীমানার বাইরে লেবানন, ফিলিস্তিনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের যে সামরিক পরিসর বেড়েছে, তার পেছনের কারিগর ছিলেন সোলেইমানি। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা ইরানকে দমিয়ে রাখতে চাইলেও ‘শত্রুর চোখে চোখ রেখে লড়াই’ করার নীতিতে ইরানকে ‘প্রতিরোধযুদ্ধ’ শিখিয়েছেন তিনিই। এজন্য সোলেইমানি ইরানের ‘জাতীয় বীর’ হয়ে উঠেছিলেন। অন্যদিকে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ তেহরানবিরোধী পক্ষের।
মার্কিন বাহিনী তাকে হত্যা করায় ‘চরম প্রতিশোধ’ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি। এমনকি দেশের আকাশসীমায় যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করেছে তেহরান। ইরানের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিগুলোতে আরও সাড়ে ৩ হাজার সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোলেইমানিকে হারানোয় তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে ইরানে।