নিউজ নেট- জুলাই /১৯ মাসে অনুষ্ঠিত এবারের ডিসি সন্মেলন হলো আগের ৩ দিনের সঙ্গে ২ দিন যোগ করে। প্রধান বিচারপতি , সেনাবাহিনীর তিন প্রধান এবং স্পিকারের সাথে মত বিনিময় করার জন্য ৫ দিন হয়েছে। এতে অবশ্যই লাভ হয়েছে এবং এর ফল হয়তো দেশবাসী পাবে। বাংলাদেশের প্রশাসনে ডিসি সাহেবরা এখনো গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিচার ািবভাগ আলাদা হওয়ায় এখন ডিসিদের দায়িত্ব কিছুটা কমার কারণে প্রতি সম্মেলনে কৌশলে তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। । ইদানিং ডিসি সাহেবরা মিটিং আর র্যালি নিয়ে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকেন। কেননা জেলায় হেন কমিটি নাই যার সভাপতি ডিসি নন। আর প্রতিদিনই গুরুত্বপুর্ণ দিবস এবং অনুষঙ্গ হিসাবে থাকবে র্যালি। অবশ্য সুখের কথা র্যালির দুরত্ব কমেছে। এখনকার র্যালি শুরু করতেই যা সময় লাগে। শেষ করতে সময় লাগেনা।
প্রায় প্রতিটি র্যালির অনুষঙ্গ স্কুলের ছাত্র ছাত্রী। র্যালিতে স্কুলের ছেলেমেয়েরা আসে। তারা অধিকাংশই বুঝে উঠতে পারেনা তারা কেন এই র্যালিতে এসেছে। র্যালি থেকে ফিরে গিয়ে তারা আর ক্লাশ করতে পারেনা। আবার র্যালি শেষে আলোচনা সভা হলে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা দেওয়া যায়না। ফলে তাদেরকে এক রকম বিদায় করেই দিতে হয়। অভিভাবকরাও প্রশ্ন তুলেছেন। একটা কাজ করলে ভালো হবে তা হলো র্যালিতে প্রতিটি স্কুলের ৬ জন করে উঁচু ক্লাশের শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে একজন শিক্ষক থাকবেন। তারা র্যালি এবং আলোচনা সভায় যা শুনবে বা বুঝবে তা পরের দিন স্কুলের এসেমবিøতে সবাইকে বলবে। এ বিষয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক বক্তব্য নির্ধারণে সহায়তা করবেন। তাহলে র্যালির মুল কথাটি সকল শিক্ষার্থীর নিকট সহজেই পৌছে যাবে।
আগে ১ জন ডিসি কর্মস্থলে জরুরী কিছু না ঘটলে বছর তিনেক থাকতেন। ইদানিং এক বছরও থাকেননা। একজন ডিসি হয়তো তার বছর চাকুরী জীবনে কোন কোন কমিটির সাথে পরিচিতই হতে পারেননা। তবে দায়িত্ব না থাকলেও ডিসিদের জবাবদীহি করতে হয় সব কিছুতেই। বিদ্যুতের বিল বাঁকী আছে আদায় করে দিতে ডিসিকে , জমি নিয়ে মারামারি করে নিহত হলে বা চুরি হলে , পারিবারিক ঝগড়ার কারণে আত্মহত্যা করলে, মরিচের দাম বাড়লে , শিক্ষক সময়মতো স্কুলে না গেলে , রাস্তার ফুটপাথ দখল হলে সব কিছুর জন্য ডিসি সাহেবকে ব্যাখ্যা দিতে হয়। সে কারণে ডিসিদের চাকুরী ২৪ ঘন্টা। তার কোন ছুটি ছাটা নাই। ‘বিষয়টি জানিনা বা আমার নলেজে নাই ’ কোন ডিসির একথা বলার কোন সুযোগ নাই। এছাড়া দেশে সময় সময় কিছু বার্নিং ইসু চলে আসে। কিছুদিন আগে এসিড নিক্ষেপ মহামারী হিসাবে দেখা দিয়েছিল। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রনে এসেছে। বর্তমান সময়ে মাদকের বিস্তার , ধর্ষণ, মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে ,কোন ভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছেনা। সাম্প্রতিক কালে যোগ হয়েছে ডেঙ্গু সমস্যা। সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে তবে সব কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর ‘নির্দেশনা’ লাগছে।
এখনকার সবচে জনপ্রিয় শ্লোগান ‘জিরো টলারেন্স’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারে সরকার গঠন করে এই শ্লোগানটা দিয়েছেন। এখন সবাই এই শ্লোগান দেন। জিরো টলারেন্স কথাটা বলতে যত সহজ করাটা তত সহজ নয়। যাদের জন্য জিরো টলারেন্স ঘোষণা তারাও জিরো টলারেন্স বলে। যিনি অনেক আগে থেকে ঘুষ খান , সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করেন , সরকারের অর্থ চুরি করেন , অপচয় করেন , তছরুপ করেন , কাজে ফাঁকি দেন এই সব মতলববাজরাও জিরো টলারেন্স বলেন। জিরো কেন , প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ভাষায় ‘সহনীয়’ টলারেন্সে থাকলেও তো আমরা অনেকদুর এগুতে পারতাম।
মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের বিবেচনায় সরকারি সেবা সহজীকরণে বেশ কিছু প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। সেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। কিছু গৃহীত হয়েছে। ডিসি সাহেবরা অনেকগুলো অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সব অধিবেশনেই তারা ২ টি জিনিষ পেয়েছেন। ক) আশ্বাস এবং খ) নির্দেশনা। নির্দেশনার তালিকা দেখলে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে দেশে সরকারি সিদ্ধান্ত বা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ডিসি সাহেবরা ছাড়া আর কোন কর্মকর্তার উপর ভরসা করা যাচ্ছেনা।
এবারে একটু খোজ নেওয়া যাক ডিসি সাহেবেদের কোন মন্ত্রী কি নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়গুলি সম্মেলন চলাকালীন দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা।
শিক্ষা মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি বন্ধে, কোচিং বানিজ্য বন্ধে ,নোট বই বন্ধে কাজ করতে ,খেলার মাঠ দখল ঠেকাতে , জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত নিয়মিত পরিবেশনের বিষয় দেখতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে কী শিক্ষা কর্মকর্তাদের পদ কী উঠে যাবে? তাদের কাজ কী ?
বানিজ্য মন্ত্রী পেঁয়াজ রসুন আদাসহ নিত্য পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে তার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। খাতুনগঞ্জে যারা আদা রসুনের দাম বাড়ায় তারা ডিসিদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ভেজাল নকল রোধে যখন জিরো টলারেন্স শব্দটি উচ্চকিত তখনই জানা গেল দুধে ভেজালের খবর। দুধে ভেজালের জন্যতো হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। বাল্য বিবাহ রোধেও কার্যকর ভুমিকা রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জন্মনিবন্ধন পদ্ধতিটি পুরোপুরি ডিজিটাল করলে বাল্য বিবাহ রোধই নয় বয়সভিত্তিক যত কার্যক্রম , স্কুলে ভর্তি , চাকুরীতে নিয়োগ , বিবাহ , বয়সভিত্তিক খেলাধুলা , চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই নির্ভুল ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। এটা করতে সমস্যা কোথায় ?
বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের ধরার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। যারা অবৈধ ভাবে বিদেশে লোক নিয়ে যাবে তাদের ধরতে পারলে ছাড়া হবেনা। এ সমস্যাটা বহু পুরাতন। যে লোকগুলো বিদেশে যায় তারা কোথায় যায় , কীকাজে যায় এসব বিষয়ের খোজ নেওয়া মন্ত্রনালয়ের পক্ষে কী খুবই কঠিন? বিদেশ যাওয়ার সময় কি কি বিক্রি করে কত টাকা দিতে হয়েছে , যে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে তার ঠিকানা সংগ্রহ করা কী অসম্ভব ব্যাপার ? আর কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমুল্যে ধান সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী । ডিসি সাহেবরা যাতে নির্বাহী অফিসারদের মাঠে নামিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারেন সে জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধি , খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা কী তাহলে ছুটিতে যাবেন? প্রত্যেক জেলায় নিরাপদ খাদ্যের অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মানুষ যাতে ভেজালমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে সে জন্য তাদের আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার চাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন ডিসিদের এই পাওয়ার দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। ডিসিরা প্রতি বছর সম্মেলনে এই পাওয়ার চান। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তবুও প্রতিবারই কথা ওঠে। মন্ত্রী বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন এটা হবেনা তবে প্রতিবারই জবাব দিতে কোন আপত্তি নাই। যদি পাওয়ার দেওয়ার প্রয়োজন পরে তাহলে আইন সংশোধন হয়না কেন?
সরকারি মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনজীবি নিয়োগ করা দরকার আইনমন্ত্রী তা অনুধাবন করেছেন। হাইকোর্টে যে সব মামলা আছে যেন সব বিষয়ে ডিসি সাহেবরা অন্ধকারে থাকেন । এই অন্ধকার থেকে আলোতে আনার জন্য ৫/৭ জন সহকারি এ্যাটর্ণি জেনারেলকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন তারা ৬৪ জেলার ডিসির সাথে যোগযোগ করে ত্বরিত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন।
শিশুশ্রম নিরসনে নির্দেশনা দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। সরকার যে ৩৮ টি কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপুর্ন হিসাবে ঘোষণা করেছে সেগুলি ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে কর্মক্ষেত্র , ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত , ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডিসিদের বড় ভুমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করে দিয়েছেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেছেন যত্র তত্র শিল্প কারখানা করতে দেওয়া হবেনা। যে গুলো হয়েছে পর্যায়ক্রমে সেগুলোও সরে দেওয়া হবে। বিসিক শিল্প নগরীতে অনেক জায়গা পরে আছে। এমনকি অনেক বিসিক শিল্প নগরীতে অনেক প্লট আছে যে গুলি সম্পুর্ণ ভাড়া দেওয়া আছে যা আইন সম্মত নয়। অথচ আবেদনকারী বরাদ্দ পায়না। এ অভিযোগ দেশের অধিকাংশ বিসিক শিল্প নগরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করার কারণ আছে।
ভেজাল ও নকল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকেরা নির্দেশনা মোতাবেক আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। এবিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স রয়েছে। জেলা প্রশাসকরা ভেজাল বিরোধী অভিযান যতেœর সাথেই করবেন কেননা তাদেরকেও তো স্থানীয় বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে খেতে হয়। তবে সমস্যা হলো একটি জেলায় যতগুলো খাদ্যের দোকান আছে সবগুলো প্রতিদিনই দেখতে হবে। অভিজ্ঞতায় জানা যায় অভিযান পরিচালনা করে ২/৪ হাজার টাকা জরিমানা করলে পরেরদিন থেকে আরো ভেজাল বেড়ে যায়। কেননা অসৎ ব্যবস্যায়ীরা জানেন একবার অভিযান হয়েছে আবার ফের ঘুরতে অনেক দিন লাগবে। আর প্রশাসন মনে করে দন্ড জরিমানা দিয়ে তারা সংশোধন হয়ে গেছে। বিষয়টা মোটেও সে রকম নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডিসিদের নজরদারী বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ডাক্তার সাহেবরা উপস্থিত থাকেন কীনা , সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কীনা ডিসি সাহেবরা তা দেখবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান ডিসিদের নিয়মিত মিটিং করার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে – জেলা , উপজেলা হাসপাতালে মিটিং করবেন তারা। সেসব জায়গায় যাবেন , পরিদর্শন করবেন। সেসব হাসপাতালে ডাক্তারদের উপস্থিতি লক্ষ্য রাখবেন। মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষধ আর ভেজাল নিয়ন্ত্রনে , স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভেজাল খাবার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক কালে আফজাল সাহেবের খবর , ফরিদপুর হাসপাতালে ‘দামী’ পর্দা কেনা বা ষ্টেথোস্কোপ কেনার বিষয়ে ডিসি সাহেবরা কেমন করে খোজ নেবেন সে কথাও বলে দিতে হবে।
ভেজাল খাদ্য ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিউিনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে ডিসিদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন। এবিষয়ে তারা সক্রিয় থেকে দায়িত্ব পালনে আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা ও উপজেলার ক্লিনিকগুলোতে যাতে অতিরিক্ত ফি আদায় করা না হয়, সে বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ঔষধ পরীক্ষা করার জন্য ১টা পরিদপ্তর আছে তাহলে কী তারা শ্রান্তি বিনোদনে যাবেন?
পরিবেশ দূষণ , ইটের ভাটার ধোঁয়া যাতে বায়ুদুষণ করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলার হয়েছে। এর ফলে ক্যান্সার ও স্ট্রোক হয়। ভুমি উদ্ধারে ডিসিদের পুরস্কারের ঘোষণা দিলেন ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জবেদ। যে যত বেশী সরকারি ভুমি উদ্ধার করতে পারবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে। ভুমি উদ্ধার ডিসিদেও কাজ। তাহলে এখন থেকে তারা চাকুরীর জন্য বেতন পাবেন আর কাজ করলে পুরস্কার পাবেন।
আবার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য ডিসিদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন ‘গ্রামকে শহর বানানোর’ অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী অনেক প্রকল্প ও কর্মসুচি নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প ও কর্মসুচি স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন , মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ দায়িত্ব পালন করেন ডিসি সাহেবরা। তাই মাঠ পর্যায়ের সব কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। এ ছাড়া দারিদ্র বিমোচন , ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা , ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালি করা , গ্রাম আদালত বাস্তবায়ন ও সরকারি বরাদ্দ সঠিকভাবে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। রেজিষ্ট্রার্ড ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয়কে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনর জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রথমবারের মতো ২৫ থেকে ৩১ জুলাই দেশব্যাপী মশানিধণ কর্মসুচি পালিত হচ্ছে। এই কর্মসুচি যথাযথ পালনের জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিসি সাহেবরা তা করেছেন। সবাইকে অনুরোধ করেছেন নিজ নিজ অফিস চত্বর পরিস্কার করতে। ডিসি সাহেবরাও ঝারু নিয়ে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এমপি সাহেবদের সাথে নিয়ে জঙ্গল পরিস্কার করেছেন। তবে সব সরকারি অফিস বিষয়টাতে আমল দেয়নি। ওদের জন্য কী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা লাগবে। ?
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সন্ত্রাস , মাদক ও যৌন হয়রানির ব্রিুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তাদের স্মরণ করে দিয়েছেন তিনি।
যৌন হয়রানি সহ সমাজের দৃশ্যমান সমস্যাগুলো বন্ধে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। এ বিষয়ে ডিসিদের মনিটরিং ও কো অপারেশন বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
কেবলমাত্র মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু কোন নির্দেশনা দেননি। তিনি শুধু বলেছেন এবারের ঈদে কোরবানীর জন্য পশু দরকার ১ কোটি ৭ লাখ। আর আছে ১ কোটি ১৮ লাখ। সুতরাং কোন পশু আমদানীর প্রয়োজন নেই। তবে চামড়া কেলেঙ্কারী হয়েছে।
ডিসি সাহেবরা একটা ব্যাংক চেয়েছেন। এটা বিবেচিত হতেও পারে নাও হতে পারে বলে জানা গেছে। ডিসি সাহেবরা ২৬ টি প্রশ্ন করেছেন বিভিন্ন কাজে যাতায়ত বেড়ে যাওয়ার জন্য তাদের গাড়ীর তেলের বরাদ্দ বাড়াতে অনুরোধ করেছেন। তবে একটা কথা কেউ কখনো বলেননি তা হলো সরকারী গাড়ীগুলি এক লিটার তেলে ৬ কিলোমিটারের বেশী কেন চলেনা? এতে প্রতিদিন সরকার কত টাকা বাড়তী খরচ করে ? আর এই যে বেশী তেলের হিসাব দেখানো হয় এই তেলের দাম কে পায় ? সরকারি কর্মকর্তাদের উপরের দিকে পদ না থাকলেও পদোন্নতি খুব বেশি হয় এজন্য শরম বোধ থেকে ডিসি সাহেবরা তাদের কার্যালয়ের নীচের দিকের কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থার দাবী করেছেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গণশুনানী আরও চমৎকার ভাবে করার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন কোনো কর্মকর্তার যদি কোনো ত্রæটি থাকে তাদের ডেকে নিয়ে মাঝে মাঝে বসে কীভাবে সংশোধন করে দেওয়া যায় সে বিষয়ে কাজ করতে তিনি বলেছেন। তিনি বলেছেন অফিসগুলোকে যাতে আমরা পুরাদমে ডিজিটালাইজড করতে পারি , সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রি পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে দালাল ও দূর্ণীতিমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে তাদের নজরদারি আরো বাড়াবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো , লেখাড়ার মান উন্নয়নে তারা যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেজন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি। জেলা উপজেলার সরকারি অফিসে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডিসিদের কাছে অগ্রগতি দেখতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন প্রথমে সমস্যা শনাক্ত করা প্রয়োজন। এসি ল্যান্ডের অফিসের কথা উল্লেখ করে এসি ল্যান্ডের কার্যক্রম কীভাবে ডিজিটালাইজেশনের ব্যবস্থা দ্রæত করা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান। কোন কর্মকর্তা দুর্ণীতি বা অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকলে তাদের তলবের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমে সংশোধনের কথা বলেছেন তাতে কাজ না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন ডিসিদের অফিসগুলোকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তাদের লজিষ্টিক সাপোর্ট ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড বেড়েছে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজ অনেক বেড়ে গেছে। ওয়াজ সসিহতে কাজ যে হবেনা সেটা ধারণায় আসতে আর কতদিন প্রয়োজন?
ডিসি সাহেবদের কনফারেন্সে নিয়ে ৫৪ টি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী , প্রতিমন্ত্রী , সচিব সাহেবরা শুধু নির্দেশই দিয়েছেন। এই বিষয়গুলি বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে , সব কাজ ডিসিরা করবেন। তাহলে মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা কী করবেন ? বিভাগীয় কর্মচারী কর্মকর্তার বহরের কাজ কী ? এক সময় সব কিছুই তাদের অধীনে ছিল প্রয়োজনেই স্বাধীন করা হয়েছে। স্বাধীনতাটা এমন হয়েছে ডিসি এসপি বাংলোর মেরামতি বা রং করার বাজেট ডিসি এসপি সাহেবরা জানতেই পারেননা। নিয়ন্ত্রন তো দুরের কথা। যত দায়িত্ব ডিসিদের উপর বর্তানো হয়েছে তাতে জেলায় কয়েকজন ডিসি লাগবে। মন্ত্রী এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিবের স্বীকারোক্তি বিশ্লেষন করলে বোঝা যায় যাদের যে কাজ তারা সেকাজ করেনা বা তাদের কাছ থেকে করে নেওয়া যাচ্ছেনা। সুতরাং কাজ আদায় করে নেওয়ার পদ্ধতি খুজে বের করা জরুরী।
৬/৯/১৯