নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনী পরিচালিত গণহত্যা, ধর্ষণ ও নিধন অভিযানের জন্য গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি।
চলমান গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৫৭ দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মামলাটি করে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে সেই মামলার শুনানি শুরু হবে। চলবে তিনদিন। শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সু চি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আইসিজে। মূলত দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নিরসনের কাজ করে থাকে ওই আদালত। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথম কোনো দেশের জাতীয় নেতা দেশের হয়ে ব্যক্তিগতভাবে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলার শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। এটা একটা রেকর্ড।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোববার নেপিডো বিমানবন্দরের মধ্য দিয়ে সু চি হাসিমুখে হেঁটে যাচ্ছেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দেশটির বেশ কিছু কর্মকর্তা। গত শনিবার রাজধানী নেপিডোতে সু চির সমর্থনে কয়েক হাজার সমর্থক সমাবেশ করে। ইয়াঙ্গুনে তার জন্য প্রার্থনা করে দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে গতকাল সন্ধ্যায় মিত্র চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্তে বৈঠক করেন নোবেলজয়ী সু চি। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সু চির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে উভয় দেশ শক্তিশালী মিত্রতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আপাত ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের ১৬ সদস্যের বিচারক প্যানেলের প্রতি আহ্বান জানাবে গাম্বিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচননের আগে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই সু চি নিজে এ মামলার নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নিধন অভিযান শুরু করে। তাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তারা এখনো দেশে ফিরতে পারেনি। অভিযানটি গণহত্যার উদ্দেশ্যে ছিল বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া প্রসঙ্গে অং সান সু চি বলেন, ‘তিনি দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় এই মামলায় নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের টিলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম ভ্যান বলেন, ‘মামলা লড়তে আইসিজেতে কোনো দেশনেতার হাজির হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অস্বাভাবিক।’