জাকির হোসেন সুমন , ব্যুরো চীফ ইউরোপ : ইতালির রোমস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ইতালির ট্যানারি শিল্পাঞ্চল – সান্তা ক্রোসে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বিষয়ে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় চেম্বার ভবনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে দুই শহরের মেয়র, চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং উদ্যোক্তাসহ প্রায় ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের ওপর বিস্তারিত উপস্থাপনার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ইতালির যৌথ সম্ভাবনার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বিষয়ে আলোচনা হয়।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে সান্তা ক্রোস শহরের মেয়র জুলিয়া ডেইডা, কাসতেল ফ্রান্কো ডি সত্তো শহরের মেয়র গাব্রিয়েলো টটি, ট্যানারি এসোসিয়েশন এর পরিচালক ড. গ্লিওছি এবং পিসা চেম্বার অফ কমার্সের সহ-সভাপতি লাউরা গ্রানাতা বক্তব্য প্রদান করেন । ফ্লোরেন্স এর বাংলাদেশের অনারারি কনসাল এ্যাডভোকেট জর্জিয়া গ্রানাতা স্বাগত বক্তব্য দেন । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রাজীব ত্রিপুরা ।
দু‘দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে পরস্পরকে জানা খুবই অত্যবশ্যক উল্লেখ করে মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রথমে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের অবহিত করেন। এরপর উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বক্তব্য প্রদান করেন। ইতালির প্রযুক্তি খুবই উন্নমানের উল্লেখ করে মান্যবার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ চামড়া শিল্প উন্নয়নে ইতালিকে কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ জানান।
সেমিনারে ইকনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন। প্রেজেন্টেশনে তিনি বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। তিনি বিদেশী বিনোয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা বিষয়েও তুলে ধরেন।
সান্তা ক্রোস শহরের মেয়র জুলিয়া ডেইডা টেনারি ভিলেজ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, ৬টি সিটি কর্পোরেশন এর আওতাভূক্ত এ অঞ্চলে ছোট-বড় প্রায় ৫০০ কারখানায় সমগ্র ইতালির ৩৫ শতাংশ চামড়াজাত পণ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। পরিবেশগত ভারসাম্য এবং পণ্যের গূণগতমান বজায় রেখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামী ব্র্যান্ডের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানী করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও, গবেষণা এবং সুদক্ষ ও আধুনিক জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ইউনিভার্সিটি অফ পিসাসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। টেনারি ভিলেজের পরিবেশগত মান বজায় রাখতে আধুনিক প্রযুক্তিতে পানি পরিশোধানাগার এবং চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল কারখানাসহ বেশকিছু স্থাপনা রয়েছে বলেও মেয়ন জানান।
এ টেনারি ভিলেজ এর সাথে বাংলাদেশের টেনারি শিল্পের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে সেমিনারে আলোচনা করা হয়। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নমানের কারিগরি সহযোগিতা প্রদান এবং ডিজাইন ল্যাব স্থাপনে সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়।
ট্যানারি এসোসিয়েশন এর পরিচালক ড. গ্লিওছি কারিগরি সহেযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। এক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সেমিনারের পরে মান্যবত রাষ্ট্রদূত একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র পরিদর্শনকরেন। উক্ত কেন্দ্রে টেনারি শিল্পে ব্যবহৃত ময়লা পানি পরিশোধন করা হয়। কেন্দ্রের পরিচালক মান্যবত রাষ্ট্রদূতকে পানি পরিশোধনের বিভিন্ন পর্যায়সমূহ ব্যাখ্যা করেন।
উল্লেখ্য, শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ধারাবাহিকভাবে ইতালির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এ ধরনের সেমিনার আয়োজন করছে।