নিউজ ডেস্কঃ গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়েছিলেন। ওই সফরে তার বিমানটি যখন নয়াদিল্লিতে নামে, তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রথমবার দেশটির সংসদ সদস্য হওয়া তথা নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, সেবার শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী নেতারা ঘরোয়াভাবে জানিয়েছিলেন, এটা ‘যেচে অপমান নেওয়া’।
সংবাদমাধ্যমটি শেখ হাসিনাকে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের ‘পরম মিত্র’ বলে অভিহিত করে বলেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বা কোনও সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন-এটাই ছিল প্রত্যাশা। প্রথম বার জিতে আসা কোনও প্রতিমন্ত্রী নন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে কলকাতায় যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। কিন্তু তাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। যা কিনা বাঁধাধরা কূটনৈতিক প্রথা এবং সৌজন্যের বিরোধী। কিন্তু এ নিয়ে সরকারিভাবে মুখ খোলেনি তারা।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে আনন্দবাজার বলছে, শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ না আসার কারণ হিসেবে ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই কাজ করেছে। একদিকে তারা যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে স্বঘোষিত এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা। কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদী সরকার, তা নিয়ে চুপ সাউথ ব্লকের কর্তারা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সব মিলিয়ে দিল্লির এই আচরণে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের অস্বস্তি যে আরও গেলো, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তান সীমান্তের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দেশটির সঙ্গে ভারতের চরম উত্তেজনাকর সময়ে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবেন।
আনন্দবাজার বলছে, ভারতকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পালন করেছেন শেখ হাসিনা। প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই উৎরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে আসাম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়।
সংবাদমাধ্যমটি শেখ হাসিনাকে ভারতের ‘পরম মিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন, তার ভারত সফরে দিল্লির এমন উদাসীনতা কেন?
দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার জন্য চাপের, সে কথা ঘরোয়াভাবে জানানো হচ্ছে।
এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একের পর এক হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির এই উদাসীন আচরণ শেখ হাসিনার ঘরোয়া রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে সংবাদমাধ্যমটি।
চীনপন্থি গোতাবায়া রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পরে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগে আছে ভারত। চীনের কাছে ঋণের ফাঁসে ‘বন্দি’ কলম্বো। নিজেদের হাম্বানটোটা বন্দরটি তাই তুলে দিতে হয়েছে বেইজিংয়ের হাতে। ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে ঘাঁটি তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বেইজিং। নতুন প্রেসিডেন্টের আমলে সেই কাজ তাদের আরো সহজ হবে বলে ধারণ করছে কূটনৈতিক মহল।
ডোকলাম কাণ্ডের পর ভুটানও ঝুঁকছে চীনের দিকে। নেপালেও চীনপন্থি সরকার। তারা তো খোলাখুলি ভাবেই বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত যৌথ সেনা মহড়া থেকে কাঠমান্ডুর সরে দাঁড়ানো, চিনের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চুক্তি করা, বেইজিংয়ের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ নিজেদের সামিল করার মতো বিষয়গুলি থেকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দিল্লির এমন শীতল ব্যবহার তাই অবাক করেছে ভারতীয়দেরই।