পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম ছাড়ছে লাখো মানুষ। মহানগরীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও দূরপাল্লার বাস কাউন্টারের সামনে এখন উপচেপড়া ভিড়। প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আপন ঠিকানায় ছুটছে মানুষ। বাস-ট্রেনে টিকিট নেই। দূরপাল্লার বাস সঙ্কট, সড়কে দুর্ভোগ, যানজট। সব জঞ্জাল পেছনে ফেলে আপনালয়ে ফেরার অন্যরম আনন্দ সবার চোখেমুখে।
সোমবার (২৬জুন) অফিস শেষে শুরু সরকারি ছুটি। তাই আজ বিকেল থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল আরও বাড়বে। ঈদের বাকি আর মাত্র দুই দিন। এ দুই দিনেই মহানগরী ছেড়ে যাবেন প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় পৌনে এক কোটি। এর বিশাল একটি অংশ কর্মসূত্রে এ মহানগরীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড, চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ বিভিন্ন কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বিরাট অংশের গ্রামের বাড়ি অন্য জেলায়। ঈদ সামনে রেখে তারা গ্রামে ফিরবেন। এবার আবহাওয়া ভালো। সে হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে যাবেন ঈদ করতে। গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বাস টার্মিনাল ও স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়। শনিবার থেকে রেলওয়ে অগ্রিম টিকিটে শুরু হয়েছে ঈদ যাত্রা। এরপর থেকে প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ।
একই দৃশ্য মহানগরীর বাস টার্মিনালগুলোতে। নগরীর কদমতলী, অলঙ্কার, সাগরিকা ও এ কে খান এলাকা থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহি বাস ছেড়ে যায়। এসব বাসে এখন ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। শিডিউলও মানা যাচ্ছে না বাসের। পর্যাপ্ত যাত্রী উঠতেই ছেড়ে দিচ্ছে বাস। যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ সামনে রেখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে বাস মালিকরা বলছেন, চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী পাওয়া গেলেও ফেরার পথে বাস প্রায় খালি আসছে। আর এটা পুষিয়ে নিতে সামান্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লার বাসে ভাড়াও বেড়েছে।
মহানগরীর পতেঙ্গা, স্টিল মিল, ইপিজেড, স্টেশন রোড, বড়পোল, বায়েজিদ, এ কে খান গেইট থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড়। যাত্রীর তুলনায় বাস কম। ফলে বাস সঙ্কটে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। যথাসময়ে বাস ছাড়ছে না। আবার ভাড়াও নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত।
এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে কাউন্টারের কর্মীদের ঝগড়া-ঝাটি লেগেই আছে। চট্টগ্রাম থেকে বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী ও ফরিদপুর অঞ্চলের বাসের সঙ্কট রয়েছে। এসব রুটে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে লক্কর-ঝক্কর বাস নামানোর অভিযোগও রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাসের তেমন সঙ্কট নেই। বিলাসবহুল এসি বাসগুলোতে অনেকে অগ্রিম বুকিং দিয়ে টিকিট নিশ্চিত করেছেন। বাস সার্ভিসগুলো এ রুটে অতিরিক্ত বাসও নামিয়েছে। রেন্ট এ কারের ব্যবসাও এখন জমজমাট। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্বিঘেœ বাড়ি যেতে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ভাড়া করছেন। আর এ সুযোগে রেন্ট এ কারের মালিকেরাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তবে নিজেদের মতো করে বাড়ি ফেরার আনন্দে অতিরিক্ত ভাড়ার কষ্ট ভুলে যাচ্ছেন অনেকে। কিছু কিছু বাস সার্ভিসের বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কেনা যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে। ২৮ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি মেইল ও ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে।
চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ১০টি আন্তঃনগর, ৪টি মেইল এবং ঈদ স্পেশালসহ ১৬ থেকে ১৮টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাবে। প্রতিটি ট্রেনের বগিতে নির্ধারিত সিটের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে স্ট্যান্ডিং টিকিটও বিক্রি করা হবে। আজ সোমবার ১০টি আন্তঃনগর, মেইল ও ঈদ স্পেশাল মিলে মোট ১৭টি ট্রেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে। ২৭ ও ২৮ জুন ময়মনসিংহগামী একটি স্পেশালসহ মোট ১৮টি ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঈদযাত্রীদের নিয়ে যাবে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন অগ্রিম টিকিটের যাত্রী এবং স্ট্যান্ডিং টিকিটসহ মিলে ১২ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হবে। শতভাগ অগ্রিম টিকিট নিশ্চিত হওয়ায় স্টেশনের আগের সে দৃশ্য পাল্টে গেছে। ট্রেনের ছাদে এবং দরজায় ঝুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণের দৃশ্যও এখন আর নেই। সুশৃঙ্খলভাবে টিকিটধারী যাত্রীরাই রেলে ভ্রমণ করছেন। তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। রেল স্টেশনেও নেই তেমন বিশৃঙ্খলা। তবে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানজট হচ্ছে। অনেক এলাকায় সড়কে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। এতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। আর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ।
অন্য জেলার বাসিন্দারা ঈদের আগেই চট্টগ্রাম ছাড়বেন। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে যাদের গ্রামের বাড়ি তাদের অনেকে ঈদের আগের দিন বাড়ি যাবেন। কেউ আবার শহরে কোরবানি শেষে গ্রামে যাবেন। ফলে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ঈদের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ নগরীর বাসিন্দা কর্মসূত্রে যারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন তাদের অনেকেও ফিরছেন নিজ শহরে।
আরএম/নিউজনেটটুয়েন্টিফোন ডটকম