১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। দিবসটি এখন সরকারিভাবে উদযাপিত হয়। বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। জীবনের শেষ জন্মদিনটি তিনি কচিকাঁচার মেলার শিশুদের সাথে কাটিয়েছিলেন। এর পর তাঁর জীবনে আর কোন জন্মদিন আসেনি। সরকারি লোকেরা সরকারি নির্দেশনা মানার তাগিদে ফুল দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রমান রাখে। এর পর তাদের নষ্ট করার সময় আর থাকেনা। প্রমানের জন্য হলঘরের আলোচনাসভায় উপস্থিতি দেখলেই বিষয়টা পরিস্কার হয়। জেলা প্রশাসন ইচ্ছা করলে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে তাতে অনেকে কর্মকর্তাকে হয়তো বিব্রতকর অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে। এবারে অবশ্য এর কারণও আছে,পরেরদিন শুক্রবার, শনিবার শবেবরাতের ছুটি। রোববার কায়দার ছুটি। কে বোকামি করবে বলুন? জাতীয় এই সব দিবস উৎসবের সাথে পালনের জন্য সরকার দাপ্তরিক কাজ কর্ম বন্ধ রাখেন। কিন্তু ঘোষনায় সরকারি ছুটি করাতেই বিপত্তি। অধিকাংশ কমচারীরা একে ছুটি হিসাবেই ভোগ করেন। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু কাজতো হয়নি।
আলোচনা সভার যারা শ্রোতা , তারা ৯৫ ভাগ স্কুলের নীচের ক্লাশের শিক্ষার্থী। তাদের ঐসব গুরুত্বপুর্ণ আলোচনার শোনার তাগাদা নেই। হলঘরে বক্তাদের কোন কথা শোনা যায়না। এমপি সাহেব নিজে বিরক্ত হয়ে হলঘর নিরব করার প্রকল্প হাতে নিলেন এবং বেশ সফলও হলেন। এমপি সাহেব বাগ্মী বক্তা না হলেও মোটিভেশাল বক্তা হিসাবে ভালো। তিনি সরাসরি বলেন, যে টুকু দরকার সেটুকুই বলেন। ডি.সি,এস.পি সাহেবও প্রয়োজনীয় কথা বলেছেন। অন্যেরা রুটিন কক্তৃতা করেছেন। তবে মুখ্য বিষয় হলো বক্তারা যত গুরুত্বপুর্ন কথাই বলুননা কেন তা ধারণ করার মতো শ্রোতাও চাই। হলঘরের সাউন্ড সমস্যা পুরনো। ফলে বক্তাদের পন্ডশ্রম হয়েছে। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে আধুনিক ডিজিটাল যুগে জেলা শহরে সাউন্ডপ্রæফ একটা হলরুম তৈরি করতে পারিনি। জেলা পরিষদ সহজেই এই অভাবটা পুরণ করে নিজেদের আয় ইনকাম বাড়াতে পারেন।একটা হলঘরে সাউন্ডপ্রæফ করে এসি লাগানো কি খুব কঠিন কাজ ? দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হলেও বড়দের প্রোগ্রামের ভীড়ে শিশুরা উপেক্ষিতই থেকে যায়। কেননা বেলুন উড়ানো আর কেক কাটার সময় কয়েকজন ভাগ্যবান শিশু থাকলেও বয়স্ক শিশুদের ভীড়ে ওরা দৃশ্যমান থাকেনা। আলোচনা সভা শেষে ২টা আবৃত্তি , ২টা গান আর ২টা নাচ দেখে একে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলতে আমরা নারাজ। আর প্রতিযোগিতার পুরস্কার ১ টি করে চটি বই এর গন্ডি থেকে পেরিয়ে কেন একটি পুরস্কার ৫ বইয়ে উন্নীত করতে পারছিনা। শিশুদের এই প্রতিযোগিতাটা কেন আমরা আড়ম্বরপুর্ন করতে পারছিনা। শিশুদের এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায় দায়িত্ব শিশু একাডেমির। কিন্তু বাস্তবে সিদ্ধান্ত হয় জেলার প্রস্তুতি মিটিংয়ে। সরকারি সকল দপ্তরে চিঠি পাঠায় জেলা প্রশাসন। কেবলমাত্র কয়েকটি স্কুলে চিঠি দেয় শিশু একাডেমি। আমরা পছন্দ না করলেও প্রতিযোগিরা হলঘরের বারান্দায় মাটিতে বসে ছবি আঁকায়। মাটিতে বসে রচনা লেখে। প্রতিযোগিতার পরিবেশ উন্নত হওয়া দরকার। আর পুরস্কার হিসাবে বই ,যেটা শিশু একাডেমি বিক্রি করে। শিশু একাডেমি প্রকাশিত বই এর এমনিতেই দাম কম। বিশেষ দিবস উপলক্ষে শিশু একাডেমীর বই ২৫-৩৩% কমিশনে পাওয়া যায়। দেড় থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে পুরস্কার হয়ে যায়। নির্ধারিত ৩ জন বিচারকরক হয়তো কিছু সম্মানী দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা এবং সিঙ্গারা জিলাপী খাওয়ায় জেলা প্রশাসন। এক্ষেত্রে শিশু একাডেমির বরাদ্দ যদি কম হয়ে থাক তাহলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। যাতে শিশুদের এই আয়োজন আড়ম্বরর্পু হয়। বড় সমস্যা হলো এই প্রতিযোগিতার বাজেট কেউ কোনদিন জানতে পারবেনা। শিশুদের প্রয়োজনে স্পন্সর যোগাড় করার চেষ্ট করা যেতে পারে। আলোচনা সভায় শিশু উপস্থাপকদের সুযোগ দেওয়া ভালো হয়েছে, তবে ওদের একটু মহড়া করাতে পারলে আরো ভালো হতো। আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে শিশুরা অগ্রাধিকার পাবে।