আজ (১৭ জুলাই ২০২১) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ঠাকুরগাঁও রিক্রুট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্নেল মোঃ জাকারিয়া হোসেন, পিএসসি, জি, ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার, রিজিয়ন সদর দপ্তর, রংপুর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঠাকুরগাঁও রিক্রুট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে কর্নেল এস এম আজাদ,এসইউপি, সেক্টর কমান্ডার, সেক্টর সদর দপ্তর, ঠাকুরগাঁও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ঠাকুরগাঁও এর মনোরম পরিবেশে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি) এর প্রশিক্ষণ মাঠে সকাল ০৯.৫৮ ঘটিকায় নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে সেক্টর কমান্ডার, সেক্টর সদর দপ্তর, ঠাকুরগাঁওসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি) এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার, রিজিয়ন সদর দপ্তর, রংপুরকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে এ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর মুজাহিদুল ইসলাম এবং প্যারেড এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রাজ মামুদ।
উল্লেখ্য, ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে শুরু হয়। ঠাকুরগাঁও রিক্রুট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (৫০ বিজিবি) এ প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ২৩২ জন রিক্রুট প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। অত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর অন্যান্য আরও ০৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।
৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর বিশেষ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য অবদানের জন্য এ বাহিনীর ০৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার হাতে গড়া এই বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশের ৪,৪২৭ কিঃ মিঃ দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যেকোন ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমন সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করে আসছে। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানসহ যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সেবা ও কর্তব্য পরায়ণতার মাধ্যমে সমগ্র জাতির শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার ১৯৭৪ সালের ০৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআর-এর ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক মূল্যবান বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদেরকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্লোভ ও নির্ভীক সর্বোপরি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরা বিজিবি’র সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনায় আরও গতিশীল ভ‚মিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করবে। তিনি বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত কুচকাওয়াজের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পনের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান। একইসাথে নবীন সৈনিকদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের নিদর্শন তুলে ধরার জন্য ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক, ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি) এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।
বিজিবি’র সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বাস্তবায়িত বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার বলেন, “বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে ইতোমধ্যে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। ‘স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট’ এর অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট সিস্টেম স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও অতি সম্প্রতি এই বাহিনীতে অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন (ATGW) সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকান্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চুয়াডাঙ্গাতে নতুন একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কর্নেল মোঃ জাকারিয়া হোসেন, পিএসসি, জি সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার, রিজিয়ন সদর দপ্তর, রংপুর প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-২৩৪৮ রিক্রুট মোঃ জামিল হোসেন এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। পরিশেষে বিজিবি’র সুসজ্জিত নবীন সৈনিকদের চৌকস দল কর্তৃক সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার, রংপুরকে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

মুজাহিদুল ইসলাম
অতিরিক্ত পরিচালক
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক