“মূর্খ বন্ধুর সাথে আলাপ করার চেয়ে জ্ঞানী শত্রুর সাথে ঝগড়া করা ভাল” এই বিবেচনায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে একটু‘ঝগড়া‘করতে চাই। চিকিৎসাপ্রার্থীর হয়রানী কমানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগিকে হাসপাতাল ছাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকা দরকার। অনেকেই ফেসবুকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন কয়েকটি বিষয় ফয়সালা হয়েছে। তবে সরকারি কাজ করতে সমস্যা চিহ্নিত করৎণ , নোট লেখা , সম্ভাব্যতা যাচাই , উর্ধতনের কয়েক দফা অনুমোদন , ড্রয়িং ডিজাইন করা , টেন্ডার করা , ঠিকাদার দেরী করে খরচ বাড়ানো ইত্যাদি কারণে এমন পরিমান সময় লাগে , অনেক সময় সে কাজের প্রয়োজনীয়তা আর থাকেনা।
ফেসবুকে লেখালেখির কারণেই হোক আর হাসপাতাল ব্যবস্থপাকদের সুদৃষ্টির কারণেই হোক, বা সচেতন রোগিদের দাবিতেই হোক করোনা রোগীর নাম তালিকাভুক্ত করার জায়গা আলাদা করা হয়েছে। এটা আগেই কররৈ কোন টাকা ফরচ হতোনা বরং কোঢিট বিস্তারে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হতো।
ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে বর্তমানে করোনা পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা নিম্মরুপঃ
১। রোগি প্রথমে গাদাগাদি , জোড়াজুড়ি করে টিকিট কাটবে।
২। তিনি যে কোন একজন ডাক্তারের কাছে যাবেন।
৩। তিনি যখন ডাক্তারের কাছে যাবেন কোভিড টেস্টের কথা লিখে নেওয়ার জন্য তখন ডাক্তারের চেম্বারের সামনে ৫০ জন রোগি গাদাগাদি করছে। অনেক ঠেলাঠেলি , পেশি শক্তি অথবা গেটের এটেনডেন্টকে ম্যানেজ করে কাগজটা ডাক্তারের টেবিলে দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টেষ্টের কথা লিখে দিবেন।
৪। এবারে আসতে হবে হেল্প ডেস্ক এ। তিনি সিরিয়াল করবেন। এই সিরিয়াল করতে প্রতিদিনই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নিশ্চয় এটা সিরিয়ালের প্রক্রিয়ার সমস্যা।
৫। এর পর ১ টার সময় নমুনা সংগ্রহ শুরু হবে সেটা ঐ প্যাথালাজিকাল ল্যাবরেটরির সাথে। যেখানে রিপোর্ট সংগ্রহকারীরা , রক্ত দাতারা আছেন এবং কোভিড টেষ্টের সবাই একসঙ্গে ভিড় করছেন। যারা কোভিড টেষ্টে এসেছেন তারা লাইন ধরেননা। সবাই একসঙ্গে গাদাগাদি করেন। এদের মধ্যে থেকেইতো প্রতিদিন ৭০/৮০ জনের করোনায় আক্রান্ত নিশ্চিত হচ্ছে।
প্রশ্ন হলোঃ ক) সকল প্রক্রিয়া শেষ করে একজন চিকিৎসাপ্রার্থী যখন হেল্প ডেস্কে নাম তালিকাভুক্ত করতে আসেন তখন সময় হয় বাড়ন্ত। কেননা ১২-৩০ এ এই তালিকা করা বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণেই প্রতিদিন ঝামেলা হয়।
খ) কোভিড টেষ্টের জন্য কোন চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনিতো না করেননা , সাথে সাথেই দিয়ে দেন।
তাহলে , যে কাজটি করলে সব বিষয় সহজ হবে, হয়রানী কমবে , রোগি তারাতারি হাসপাতাল ছাড়বে , কারণ তাদের অধিকাংশ করেনা আক্রান্ত। বিদেশের হাসপাতালে কোন রোগির চিকিৎসা শেষ হলে ৫ মিনিট আর হাসপাতালে থাকার সুযোগ নাই। যতটুকু সময় হাসপাতালে থাকার দরকার ততটুকু সময়ই হাসপাতালে থাকা যায়। আমাদের দেশে অন্য রকম।
পরামর্শ ঃ হেল্প ডেস্কেই করোনা পরীক্ষার্থীদের নাম তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নাম তালিকাভুক্ত করেই তিনি নমুনা দিয়ে বেড়িয়ে আসবেন। সর্বোচ্য ২০ মিনিটেই একজন করোনা পরীক্ষার প্রার্থী হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন।
এই কাজটা তো ইমারজেন্সির সামনে চমৎকার কাঁচের ঘর আছে, সেই ঘরের মধ্যে তালিকাভুক্তি এবং নমুনা সংগ্রহের কাজ হতে পারে।
অথবা পরে যে বিল্ডিংয়ে টিকা দেওয়া হলো সে বিল্ডিংয়েও হতে পারে। একথায় কোভিড পরীক্ষর্থীরা কোন ভাবেই সাধারণ রোগিদের সাথে মিশবেননা।
হাসপাতাল তত্বাবধায়ক বা যারা হাসপাতালের রোগী/ কোভিড ব্যবস্থাপনার দ্বায়িত্বে আছেন তারা ভেবে দেখতে পারেন। আমার ধারণা , ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে যে পরিমান মানুষ করোনা টেষ্ট করতে আসে , বেলা ১১ টা থেকে ১ টার মধ্যেই নমুনা সংগ্রহ শেষ হবে।
পুলিশ প্রশাসন বেশ ভালো কাজ করছে। এস পি সাহেব নিজে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু তিনি কতক্ষন? করলে কি হবে তাদেরতো সীমাবদ্ধতা আছে। প্রতিদিন প্রতিটি মাঝারী বাজারে ২০০ জন করে এবং পৌরসভায় ৫০০ পুলিশ দিতে হবে। পুলিশ পাহাড়া দিলে স্বাস্থ্য বিধি মাননো এটা সাময়িক হতে পারে। সাসটেইন করবেনা। তা হলে সমস্যার সমাধান হলোনা। বিনা মুল্যে মাস্ক বিতরণ করলে মানুষ মনে করতেই পারে বাজারে গেলে এস পি বা ডিসি সাহেব বিনামূল্যে মাস্ক দিবে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামুলক মূল্য পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটি মাস্কের দাম ১০ টাকা।
জেলা প্রশাসন ২/৩ টা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলো , অনেক টাকার তেল পুড়ে ৪০০ টাকা জমিমানা করলো। এটাও কোন কাজের কাজ হলো বলে মনে করার কোন কারণ নাই। মোবাইল কোর্টের প্রয়োজন আছে , তবে জরিমানার পরিমান বেশী না করলে ২০/৫০ টাকা জরিমান করে তাদের সাহস আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এ ব্যপারে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করতে চাই। আমি লন্ডন টিউবে উঠেছিলাম মাস খানেক। খরচ সবচে কম হওয়ায় লন্ডন শহরে সবচেয়ে বেশী মানুষ চলাচল করে টিউবে। সেখানে কোন টিকিট চেকার নাই। সারাদিন ট্রেনে ভ্রমন করলেও কেউ কোন প্রশ্ন করবেনা। টিকিট না করে ট্রেনে উঠার সুযোগ একেবারেই নাই। তবুও কায়দা কানুন করে ব্যাগেজ প্যাসেজ দিয়ে কেউ যদি বিনা টিকিটে যায় যেতেও পারে। তবে আবার টিকিট দিয়ে ষ্টেশন থেকে বেরুতে হয়। কোন টিটি , চেকার কেউ না থাকলেও যদি কেউ আনঅথরাইজ প্যাসেঞ্জার হিসাবে ধরা পড়েন তা হলে ২০০ পাউন্ড জরিমানা আদায় করবে পুলিশ। ওরা লন্ডন পুলিশ , ম্যানেজ করা যায়না। এখন ভাবুন , লন্ডনের ৬টি এরিয়া ভ্রমন করতে ২৪ ঘন্টার জন্য টিকিটের দাম ৬ পাউন্ড। ৬ পাউন্ডের টিকিট ফাঁকি দিতে ২০০ পাউন্ডের জরিমানর ঝুঁকি কে নেবে বলুনতো ?। আর আমাদের দেশে ১০,০০০ টাকার অপরাধ করে ধরা পড়লে ২০০ টাকা জরিমানা। নুতন জেলা প্রশাসক এসেই লকডাউন দিতে হয়েছে। তবে আগের লকডাউন ,কঠোর বিধির চেয়ে এবারের লকডাউন এটনু মনে ধরেছে। আমরা আরো কঠোর চাই। ঠাকুরগাঁও বাসীকে বাঁচাতে আপাতত; এর বিকল্প নাই। সেই সাথে নিবেদন , আগের ডিসি সাহেব চেষ্টা করেছেন। নবাগত ডিসি সাহেব আরো শক্ত হাতে ধরবেন , প্রয়োজনে খানিকটা অমানবিকও হবেন। শেষে আবার সেই কথা হয় কিনা “ইহাতো আমারো ছিল মনে”