• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান -অ্যাডভোকেট আবু মহীউদ্দীন

সাংবাদিকের নাম / ৪৭ জন দেখেছেন
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বাংঙ্গালীর অবরুদ্ধ চেতনার মুক্তি এবং জাতিসত্বা পুনর্জাগরনে ভাষা আন্দোলনের অবদান রেনেসাঁসের সমতুল্য। ভারতবর্ষে ভাষা সমস্যা দীর্ঘকালের। রাজনৈতিক চেতনা প্রাধান্য পাওয়ার সাথে সাথে ভাষা সমস্যাও গুরুত্ব পেতে থাকে। বিভিন্ন স¤প্রদায়ের চেতনার উন্মেষ ঘটলে সর্বভারতে একটি সাধারণ ভাষা প্রচলনের দাবী ওঠে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হওয়া উচিত এ বিষয়ে প্রথমে বিতর্ক শুরু হয় বুদ্ধিজীবি মহলে। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করার পস্তাব করলে ড. মুহম্মদ শহীদুলাহ জ্ঞানগর্ভ যুক্তি দিয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্টভাষা করার পাল্টা পস্তাব করেন , এর ফলে পুর্ব বাংলার শিক্ষিত সমাজ ও ছাত্রদের মধ্যে বাংলাকে রাষ্টভাষা করার স্বপক্ষে একটি প্রবল জনমত সৃষ্টি হয়।

এর পর আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ বন্ধুর পথ পেরিয়ে বহু রক্তের বিনিময়ে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। রফিক , সালাম , জব্বার ,বরকতের রক্তস্নাত একুশে ফেব্রুয়ারী মহান ভাষা দিবস বা শহীদ দিবস হিসাবে বাংগালী জাতি ১৯৫২ সাল থেকে মর্যাদার সংগে পালন করে আসছে। বাংগালী জাতির অমুল্য সম্পদ ভাষা শহীদদের রক্তমাখা অমর একুশে, বাংলার মাটিতে , আলো বাতাসে স্থান করে নিল আমাদের অমিত প্রেরনার অনিঃশেষ উৎস এবং অধিকার আদায় ও আত্ম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে।

আমাদের মাতৃভুমি ও মাতৃভাষার প্রতি সকলেরই গভীর ভালোবাসা রয়েছে। এই ভালোবাসার টানেই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বুকের রক্তে পাবিত হয়েছে রাজপথ । প্রান দিয়েছেন ভাষা সৈনিক বরকত , সালাম , রফিক , শফিক , জব্বার প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধু আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদাকে রক্ষা এবং সুপ্রতিষ্ঠিতই করেনি , অন্যান্য গুরুত্বপুর্ন জাতীয় আন্দোলনের প্রেরনাও জুগিয়েছে। আমাদের ৬ দফা , উনসত্তরের গণআন্দোলন , একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ এসব কিছুর ভিত্তি রচনা করেছে অমর একুশ। এই ভাষা আন্দোলন আমাদের কবি সাহিত্যিকদের বেদনার্ত , উদ্বেলিত , এবং উদ্দীপিত করেছে।

শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলন শুরু করেন ১৯৪৮ সালে । ১১ মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সমগ্র দেশ সফর করেন, জনমত সৃষ্টি করতে থাকেন। প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার শেখ মুজিবকে ফরিদপুরে গ্রেফতার করে। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই আবার দেশব্যপী জনমত সৃষ্টির জন্য সফর শুরু করেন। সরকার ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার করে। জুলাই মাসে মুক্তি পান। এভাবে কয়েকদফা গ্রেফতার ও মুক্তির পর ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর আর্মানিটোলা ময়দানে জনসভা শেষে ভুখা মিছিল বের করেন। দরিদ্র মানুষের খাদ্যের দাবিতে মিছিল করতে গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী , সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।

এবারে তাঁকে প্রায় দু বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয়। ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে বাংলাকে মাতৃভাষার মর্যাদার দাবিতে যে আন্দোলনের দিন থেকে বারবার কারাগারে বন্দি হতে থাকেন। যখনি মুক্তি পেয়েছেন আবার বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার মর্যাদা দান , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারীদের দাবি , ক্ষুধার্ত মানুষের অন্নের দাবিতে আন্দোলন ও ও ভুখা মিছিল করেন।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে সমগ্র পূর্ববঙ্গে যখন সফর করতে যান তখন ফরিদপুর – গোপালগঞ্জ সহ বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার হন। মুক্তি পেয়ে আবারো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হন এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ মুক্তি পান। দীর্ঘদিন অনশন করেছিলেন রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার দাবি আদায়ের জন্য । তাঁর শরীর ভেঙ্গে পড়েন। এর পর সুস্থ হয়ে ঢাকায় এসে আবার কাজ শুরু করেন।

শেখ মুজিবের নের্তৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে গৌরবোজ্জল ১৯৫২ তে এবং যা ঐতিহাসিক অপ্রতিরোধ্য পর্যায়ে দেশটা গিয়ে পৌছাল ১৯৭১ এ , বিশ্বের দরবারে বাংগালী জাতির একটি পৃথক ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী ,গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মুক্তিযুদ্ধে।

রফিক সালাম বরকতসহ অসংখ্য নাম না জানা শহীদের রক্তবীজ থেকে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি। মাতৃভাষার জন্য তাঁদের আত্মত্যাগে ভাস্বর এই দিনটি ১৯৯৯ সালে পেল বিশ্ব স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর এর ঘোষিত

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস , এবং স্বীকৃতি বায়ান্নর ভাষা শহীদদের এক গৌরব গাঁথা জয়। তারাও এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন। বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই , পৃথিবীর সকল দেশেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে।

ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকেই স্বীকৃতি দেয়নি , অমর একুশের শহীদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে , জাতি হিসাবে পৃথিবীর বুকে আমাদের মহিমান্বিত করেছে।

যদিও ভাষা আন্দোলন মানে ২১ ফেব্রুয়ারিকেই আমরা বুঝি, তবে ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের কবলমুক্ত হলে স্বাধীন পাকিস্তানের আদর্শ কি হবে ? অফিস আদালতের ভাষা কি হবে , এ নিয়ে শুরুতেই দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়। স্বাধীন পাকিস্তানের শাসকদের মাতৃভাষা ছিল উর্দু । পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ জনগোষ্ঠি যে অঞ্চলে বসবাস করে সেই পুর্ববঙ্গের মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। এ বাংলাকে অবজ্ঞা করে অফিস আদালত , কোট কাচারী , ডাক বিভাগ সর্বত্র ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষা চালু হয়। তবে ৪৭ সালের আগে থেকে ড. শহিদুল্লাহর মতো কয়েকজন দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী ভাষার দাবী নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মোঃ আবুল কাশেমের বাসায় ছাত্র শিক্ষক সমন্বয়ে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়। এ সংগঠনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার দাবীতে এককপি পুস্তিকা ছাপানো হয়। পুস্তিকাটির শিরোনাম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু।

৬ ডিসেম্বর ৪৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মোঃ আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা এবং প্রথম প্রতিবাদ মিছিল।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদে কংগ্রেস দল থেকে নির্বাচিত ( কুমিল্লা) ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংসদের কার্যবিবরনী ইংরেজী ও উর্দুর সাথে বাংলায়ও লেখার দাবী করে বক্তব্য রাখেন।

সেদিন গণপরিষদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁন তার বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। এর ফলে মুসীলম লীগ থেকে নির্বাচিত সকল সদস্য একযোগে বিপক্ষে ভোট দেয়। আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধের সুচনা লগ্নে এই ভাষা সৈনিককে হত্যা করে।

২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮। পাকিস্তান গণপরিষদের কার্য বিবরনী বাংলায় না লেখার জন্য ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ ২৬ ফেব্রæয়ারি ৪৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট আহবান করে।

২ মার্চ ১৯৪৮। রাষ্ট্রভাষা পরিষদকে সম্প্রসারিত করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ১১ মার্চ দেশব্যপী সাধারণ ধর্মঘট আহবান করা হয়। ১১ মার্চ ধর্মঘটের পিকেটিং করার অপরাধে শামসুল হক , শেখ মুজিবুর রহমান , অলি আহাদ ,গোলাম মাহবুব শওকত আলী খালেদ নেওয়াজ ও বাইতুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর প্রতিদিনই সবস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবীতে মিছিল শোগান চলতে থাকে – প্রকম্পিত হতে থাকে রাজপথ ।

১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ পুর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠকে বসতে বাধ্য হন এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক পেশকৃত ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। শেখ মুজিব সহ ১১ মার্চের গ্রেফতারকৃত সবাই জেলখানা থেকে ছাড়া পান।

১৯ মার্চ ১৯৪৮ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম বারের মতো ঢাকায় আসলেন এবং ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক নাগরিক সম্বর্ধনায় ঘোষনা করলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। উপস্থিত ছাত্র জনতা তার এ বক্তব্য মেনে নেয়নি।

২৪ মার্চ কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কায়েদে আযম বলেন Urdu , Urdu shall be the state language of Pakistan. ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নের্তৃত্বে সবাই নো নো ধনি তুললো।

১৯৪৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় শিক্ষক উপদেষ্টা বোর্ডের সভায় আরবি হরফে বাংলা শিক্ষা দানের কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ সাথে সাথে প্রতিবাদ মিছিল বের করে।

১৯৫০ সালের ১১ মার্চে ভাষা দিবস পালন করা হয় এবং এ সময়েই বাংলা ভাষাকে আরবি হরফে লেখার কর্মূসুচি বাতিল করা হয়।

১৯৫১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সকল স্কুল কলেজে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলি শুরু করা হয়।

২৩ ফেব্রæয়ারি ১৯৫১ প্রাদেশিক প্রধান মন্ত্রীর নিকট স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মৃত্যু হলে খাজা নাজিমদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা আসেন এবং ২৭ জানুয়ারি ১৯৫২ পল্টন ময়দানের জনসভায় ঘোষনা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। খাজা নাজিমদ্দীনের বক্তব্যের প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে এবং স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার বার লাইব্রেরী ভবনে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়।

৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা শহরের সকল স্কুল কলেজে ধর্মঘট পালিত হয় এবং এ্যাডভোকেট গাজীউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশব্যপী সাধারণ ধর্মঘট আহবান করা হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১ অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

এদিকে ১৪৪ ধারা অমান্য করতে ফজলুল হক ও সলিমুলাহ হলে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২ টি সভা থেকেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয় এবং তা অতি দ্রুত সংগ্রাম পরিষদকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ফজলুল হক হল এবং ঢাকা হলের মধ্যে পুকুরপাড়ে ছাত্ররা গোপনে সভা করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ভাবেই হোক ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা হবে।

এর পর জাতির জীবনে এসেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। চারদিক থেকে ছাত্ররা এসে জড়ো হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কোন কোন সদস্য ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গার পক্ষে যুক্তি দিলেও আব্দুল মতিন যুক্তি দিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে বক্তব্য রাখলে ছাত্ররা সমর্থন করে। ধনি উঠলো ১৪৪ ধারা মানিনা , মানিনা। এ সময় সিদ্ধান্ত হলো সত্যাগ্রহ হবে। এর পর ছাত্ররা দলে দলে বের হতে থাকে। পুলিশ লাঠি চার্জ , টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে হবে। শত শত ছাত্র গ্রেফতার হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ মেডিকেল হোষ্টেলে ঢুকে পড়ে। গুলির আঘাতে রফিক উদ্দীনের মাথার মগজ আলাদা হয়ে যায়। ১২ নং ব্যারাকের সামনে বরকত গুলিবিদ্ধ হন। সরকারি কর্মচারী আব্দুস সালাম এদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই সিদ্ধান্ত জানানো হলো ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ঘোষনা না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা শহরে পুর্ন হরতাল ।

২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ শুক্রবার সকালেই বিভিন্ন স্থান থেকে হেঁটে এসে লোকজন গায়েবানা জানাজায় অংশ নিলো। ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শফিউর রহমান মারা যান। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনার নির্মান করা হয়।

১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদে পাকিস্তান ইসলামি রিপাবলিক এর প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত ২১৪ নং অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় বলা হয় পাকিস্তানের রাষ্টভাষা হবে উদু এবং বাংলা।

একুশের রক্তাক্ত ঘটনার খবর সারা দেশের সকল জেলা ও মহকুমা শহরে ছড়িয়ে পড়লো। তাৎক্ষনিকভাবে চট্রগ্রাম থেকে কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন। কাঁদতে আসিনি , ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি। বাগেরহাটের শেখ সামসুদ্দিন এক কবির রচনায় সুর দিলেন , ঢাকার শহর রক্তে রাঙ্গাইলি।

১৯৫৩ সালে প্রথম শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রভাত ফেরী বের হয় এবং আজিমপুর গোরস্থানে শহীদ বরকত শফিউরের কবরে ফুল দেওয়া হয়। এ সময় মিছিলে গাজীউল হক রচিত ভূলবনা , ভুলবনা ,একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলবনা , গানটি গাওয়া হয়। ঢাকা কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি কবিতা লিখেন “ আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” কবিতাটি ৫৩ সালের কোন একদিন সন্ধায় ব্রিটানিয়া সিনেমা হলে ঢাকা কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গায়ক আব্দুল লতিফ সুর তুলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। কয়েকদিন পরে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী সহ ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্রনেতাকে কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয়।

আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা আলতাফ মাহমুদের সুরে প্রতিটি বাঙ্গালী ধমনিতে সেই যে গানের সুর প্রতি একুশে ধনিত হচ্ছে।

একুশের রক্তাক্ত আন্দোলন মুসলীম লীগ সরকারের পতনের ঘন্টাধনি বাজিয়েছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির কথা আমরা সবাই জানি। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ওয়াদায় শহীদ মিনার নির্মানের প্রতিশ্রুতি ছিল। ১৯৫৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারের পুর্তমন্ত্রী আব্দুস সালাম মেডিকেল কলেজের হোষ্টেলের সামনে শহীদ মিনার নির্মানের স্থান নির্বাচন করেন।

এ কথা ঠিক , ৫২ এর একুশে শুধু ভাষা আন্দোলনই ছিলনা এদিন স্বাধীনতার বীজও রোপিত হয়েছিল। তাইতো স্বাধীনতার পর শহীদ মিনারের বুক চিরে লাল সুর্য উদিত হচ্ছে।


এধরনের আরও সংবাদ

Editor: Ataur Rahman
News editor : Joherul Islam
email: newsnat24@gmail.com
Phone: 01717253362, 01744367842
N.C Road, Thakurgaon.