নিউজ ডেস্ক: ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও দাপুটে রাজনীতিক ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। শুধু রাজধানীই নয়, রাজনীতির খোঁজ-খবর রাখেন সারা দেশের এমন প্রায় সবারই জানা ছিল ঢাকায় তার দাপটের বিষয়টি। তিনি মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন। এ সুবাদে রাজধানীতে তার প্রভাব আরও বেড়ে যায়।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
রাজনীতিতে যেভাবে উত্থান
সাদেক হোসেন খোকার রাজনীতিতে প্রবেশ বামপন্থি রাজনীতির হাত ধরে। আশির দশকে সম্পৃক্ত হন বিএনপির রাজনীতিতে। তখন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়। নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এ আন্দোলন শুরু করে ৭ দলীয় জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ওই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন। খোকাকে সেই আন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়। ১৯৯০ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। খোকা তখন এর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ওই ঘটনার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়সহ পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থীরা। খোকাই বিএনপি থেকে ঢাকায় একমাত্র নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তিনি ওই সময় ঢাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে একক নেতৃত্ব দেন। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ও দাপুটে নেতা হয়ে উঠেন।
সাদেক হোসেন খোকা ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচিত হন। তাকে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে তার বড় ভূমিকা ছিল। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। পাশাপাশি খোকাকে সভাপতি ও আবদুস সালামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। নতুন করে কমিটি গঠনের জন্য আবার ২০১১ সালে সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এই কমিটির বিরুদ্ধে খোকার প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসের অনুসারীরা নানা অভিযোগ তোলেন।
ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলে যে সংস্কারের দাবি উঠেছিল, তার প্রতি সাদেক হোসেন খোকার সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোকা পুরান ঢাকার গোপীবাগে পৈতৃক বাড়িতে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু রাজনীতিতে নন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরেই ১৯৭২ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে ক্লাবকে তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় থেকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খোকা ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ফরাশগঞ্জ ক্লাবের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান ছিলেন।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানান, খোকাকে তারা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাশে পেতেন। যখনই ডাক পড়েছে, তখনই তিনি ছুটে গেছেন পুরান ঢাকাবাসীর কাছে।