নিউজ ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা জালিয়াতিতে জড়িত জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) কথিত চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আলোচিত শাহেদ করিমের সঙ্গেও সখ্য ছিল সাবরিনার। তারা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। একসঙ্গে ডিজে পার্টিতেও যেতেন তারা।
এছাড়া জেকেজির উত্থানের নেপথ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বড় একটি চক্র কাজ করেছে বলে জানা গেছে। ওই চক্রের মাধ্যমেই জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যন ডা. সাবরিনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছ থেকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি বাগিয়ে নেন। রিমান্ডে জেকেজিতে করোনা জালিয়াতির তিন মূলহোতাকে জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের বেশ কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য তারা এই মুহূর্তে প্রকাশ করছেন না। তারা তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করছেন।
রোববার (১৮ জুলাই) একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ‘সাবরিনার মাধ্যমেই করোনা পরীক্ষা কাজ বাগিয়ে নিয়েছে জেকেজি’
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, অন্যের সিমকার্ড ব্যবহার করে ডা. সাবরিনা প্রতারণা করেছেন।ডা. সাবরিনা ও আরিফের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে গোয়েন্দারা প্রায় দুই ডজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছেন। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডসহ নানা তথ্যউপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ওভাল গ্রুপ ও জেকেজির সাত পরিচালকসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আরিফ ও সাবরিনার বন্ধু ও বান্ধবীও রয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করছেন না গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার মধ্যরাতে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদ এবং জেকেজির ডা. সাবরিনাকে মুখোমুখি করা হয়েছিল। তাদের দুজনের মুখেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার নাম উঠে আসায় দুজনকে সামনাসামনি করে ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন গোয়েন্দারা। এ সময় সাবরিনা জানান, আরিফের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তাকে অনিয়ম সম্পর্কে জানিয়েছেন। তাকে বলেছিলেন, এখন থেকে আমি (সাবরিনা) আর আরিফের সঙ্গে নেই। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, যা হওয়ার তো হয়েই গেছে, এখন আর মাথা গরম করা যাবে না। তবে শাহেদ কি বলেছেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি সূত্রটি।
আরও পড়ুন: ‘তুই টাউট, তোর জন্যেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে’
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদের সঙ্গে জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা পরস্পরকে আগে থেকে চিনতেন। তাদের জানাশোনা ছিল দীর্ঘদিনের। নিয়মিত তারা পার্টিতে অংশ নিতেন। সেই পার্টিতে চলত ডিজে-মাদকতা। শাহেদ-সাবরিনা ছাড়া সেই পার্টিতে আরও অনেক চেনামুখ অংশ নিতেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ ও সাবরিনা একে অপরকে চেনা-জানার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। দিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। করোনা সনদ জালিয়াতির আইডিয়া শাহেদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডা. সাবরিনা।
জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) বিরুদ্ধে অভিযোগ- সরকারের কাছ থেকে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিচ্ছিল জেকেজি। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজিন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: যেভাবে প্রকাশ পেল ডা. সাবরিনার কুকীর্তি
সে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেটের ডিজাইন তৈরি করত বলে হিরু জানায়। আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও হিরু জেকেজির জালিয়াতির কথা স্বীকার করেছে। এরপর ২৩ জুন জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চারজন গ্রেফতার হয়। আর আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনার সম্পৃক্ততা উঠে আসে। তবে সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান নয় বরং প্রতিষ্ঠানটির কোভিড-১৯ বিষয়ক পরামর্শক বলে দাবি করেন।