নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট নয়, শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে চায়। বিসিবির পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগেই তাদের পাকিস্তান সফর সম্পর্কে এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনও জানিয়েছেন, টেস্ট সিরিজ নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে আয়োজনের জন্য তারা পিসিবিকে প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিসিবির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব পাওয়ার পরই রেগে-মেগে আগুন হয়ে রয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ইতিমধ্যেই তারা বিসিবিকে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মানি।
এবার এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আজহার আলি এবং কোচ ও প্রধান নির্বাচক মিসবাহ-উল হক। বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে তারা অনেক ‘বড় অবিচার (গ্রেট ইনজাস্টিস)’ বলে অভিহিত করেছেন।
পাকিস্তানে বাংলাদেশের নির্ধারিত সফর আগামী জানুয়ারিতে। ফিউচার ট্যুর প্লানেরই অংশ এটা। তো পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশ খেলবে কি খেলবে না- তা নিয়ে চলছে দীর্ঘ জ্বল্পনা-কল্পনা। বিসিবি সরাসরি কখনো বলেনি যে তারা খেলতে যাবে না। তারা বারবার বলে আসছিল, ‘আমরা নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছি। তারা যে রিপোর্ট দেবে, তার ওপরই নির্ভর করবে সিদ্ধান্ত। এছাড়া সরকারের অনুমতির ব্যাপারও রয়েছে।’
শেষ পর্যন্ত আগামী জানুয়ারিতে নির্ধারিত সময়েই পাকিস্তান যেতে রাজি হয়েছে বিসিবি। তবে তারা জানিয়েছে, সফরে কেবল টি-টোয়েন্টিই খেলতে চায় বাংলাদেশ। টেস্ট নয়।
করাচিতে শ্রীলঙ্কাকে বিশাল ব্যবধানে হারানোর পর মিডিয়ার সামনে কথা বলেন মিসবাহ এবং আজহার আলি। সেখানেই তারা বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নিজেদের নাখোস হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন। প্রধান কোচ এবং প্রধান নির্বাচক মিসবাহ বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত গ্রেট ইনজাস্টিস’। আজহার আলি বলেন, ‘বাংলাদেশের পাকিস্তানে না আসার মত তো কোনো অজুহাত সৃষ্টি হয়নি!’
মিসবাহ-উল হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট ফিরে এসেছে, এটা তো মহা গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। শুধু তাই নয়, কোনো ঝামেলা ছাড়াই, একেবারে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে। কিন্তু তারা (বাংলাদেশ) যদি পাকিস্তানে এসে টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা হবে খুবই হতাশাজনক একটি ব্যাপার।’
মিসবাহ জানান, পাকিস্তানে তো এখন তাদের না আসার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় এসে তো আর কোনো অজুহাত খাটে না। তাদের জন্য তো আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আয়োজন করছিই! এখন এ নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন কিংবা অভিযোগ তোলা হয়, তাহলে সেটা হতাশাজনক। কারণ, পাকিস্তানে এখন বিদেশী দলগুলো আসছে। সফর হচ্ছে। অন্য দলগুলো এখানে এসে খেলছে। এমনকি আপনি যখন রাজি হচ্ছেন যে, এখানে এসে টি-টোয়েন্টি খেলবেন শুধু, টেস্ট খেলবেন না, তখন এ ধরনের মানসিকতা প্রকাশের কারণ আমার বোধগম্য নয়।’
এটাকে স্রেফ অজুহাত ছাড়া আর কিছুই মনে করছেন না মিসবাহ। তিনি বলেন, ‘আমি তো অন্য কোনো কারণ দেখি না। আমার কাছে খেলতে না চাওয়াটাকে একটা অজুহাত ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। এটা হবে পাকিস্তান ক্রিকেটের সঙ্গে চরম অবিচার। কারণ, এখানে ক্রিকেট চলছে। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি- সবই হচ্ছে।’
পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক আজহার আলি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, পিসিবি বিষয়টা দেখছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, আসলে এখানে সফর করতে না আসার মত কি কারণ থাকতে পারে! এটা তো আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। অনেক দল ইতিমধ্যে এসেছে, সামনে আসবে। এখানে অনেকগুলো পিএসএল ম্যাচের আয়োজনও করেছি। বিশ্ব একাদশ এখানে এসেছে। বিশ্বের নামি-দামি ক্রিকেটাররা এসে খেলে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, শ্রীলঙ্কা দল একবার নয়, দু’বার এসেছে। তারা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছে। যদি এশিয়ার প্রতিটি দল একে অপরকে সহযোগিতা না করে এবং প্রতিটি বোর্ড একে অপরকে সহযোগিতা না করে, তাহলে কি সব কিছু শেষ হয়ে যাবে?’
বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আজহার আলি বলেন, ‘আমরা খুব কম টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই। আমার মনে হয়, একই অবস্থা বাংলাদেশেরও। সুতরাং, আমরা তো একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। আমি আইসিসির কাছেও আবেদন জানাবো, তারা যেন এ নিয়ে একটা পদক্ষেপ নেয়। কারণ, পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরে এসেছে। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও রয়েছে।’