নিউজ ডেক্সঃ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ভিসির দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন তারা। ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলগুলোতে এখনও দলীয় নেতাকর্মী রয়েছে। ১৯ জন সাময়িক বহিষ্কার হলেও তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়নি। এছাড়া সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা হলেও আবারও যে শুরু হবে না তার নিশ্চয়তা তারা পাচ্ছেন না। এ কারণে আগামী ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত রাখার দাবিও জানা তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিএসডব্লিউ পরিচালক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি জানান, স্থায়ী বহিষ্কার করা হলে পরে আদালতে হেরে যেতে হয়। এবার যাতে হেরে যেতে না হয়, সেজন্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি করেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।’
হলগুলো রাজনৈতিক নেতাদের দখলমুক্ত করার ব্যাপারে ডিএসডব্লিউ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘যাদের থাকার বৈধতা নেই, তাদের বের করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আজকেই হলগুলোতে ক্লিনিং অভিযান হবে।’
তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নিতে হবে। আমরা তোমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছি। তোমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলছি না, আমরা শিক্ষকরা তোমাদের পাশে রয়েছি। তবে কেন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছো?
ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা ড. মিজানুর রহমানের পরামর্শে সাড়া দেননি।
বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
‘আবরার আমার সন্তানের মতো ছিল। তোমাদের যেমন কষ্ট লাগছে তার মৃত্যুতে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে। এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তার মৃত্যুতে দুঃখ তোমরা পেয়েছ, আমিও পেয়েছি। আমরা সকলেই মর্মাহত।’
তবে এসব আশ্বাস মানতে রাজি নন শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সবশেষে জানান, ১০ দফার মধ্যে যেগুলো প্রশাসনের এখতিয়ারে রয়েছে সেগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে। ভর্তি পরীক্ষা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে থাকায় সেটিও বন্ধ থাকবে।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে গত রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরার ফাহাদকে শেরে-ই-বাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল।
আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের লেভেল-২ এর টার্ম ১ এর ছাত্র ছিলেন। তিনি শের-ই-বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে তিনি স্কুলজীবন শেষ করে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।