নিউজ ডেস্কঃ পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সবার পরার প্রয়োজন নেই। এটা শুধু স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত চিকৎসক-নার্সদের পরার জন্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিপিই সবার জন্য নয়, যারা করোনা আক্রান্ত রোগী দেখবেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা যারা করবেন, শুধু তার জন্য প্রয়োজন, সকলের জন্য নয়। এটা দরকার আমাদের নার্সদের জন্য, ডাক্তারদের জন্য। এখন দেখছি রোগীর সেবা যারা করবে তারাই পাচ্ছে না, অথচ ঘরে বাইরে সবাই একখানা করে পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এসময় একটু হেসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই পরে বেড়াবে, তাহলে সবাইকে আমরা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব রোগীর সেবা করতে। যাকে পরা দেখব, তাকে আগে রোগীর সেবা করতে পাঠাব। তাছাড়া আর কী করব?
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে চলমান কার্যক্রম সমন্বয় করতে ৬৪ জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন আইইডিসিআর সেখানে যুক্ত হলে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ ভিডিও কনফারেন্স শুরু হয়। ৬৪ জেলার কর্মকর্তারা এ ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গণভবনেই দেখলাম একেবারে বাবুর্চিখানা থেকে শুরু করে সবাইকে পিপিই পরিয়ে রাখা হলো। শেষে আমাকেই একটু কঠোর হতে হলো।
তিনি আরও বলেন, এটা তো ঘরে বসে পরার না। আমরা যদি ঘরে ঘরে সবাই এটা এভাবে পরতে শুরু করি তাহলে যখন প্রয়োজন হবে যাদের আসলেই এটা দরকার তারা পাবে না। দ্বিতীয়ত এগুলোকে যথাযথভাবে ডিসপোজাল করতে হয়। সেটাও দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি নিজেকে অসহায় মনে করেন কাপড়ের গাউন বানিয়ে পরতে পারেন, সাবান দিয়ে বার বার ধুয়ে ফেলবেন, বার বার পরবেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের কাছে যেতে যে পিপিই পরা হয়, সেটা তো সাধারণ কারো ব্যবহার করারই দরকার নেই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরিস্থিতি বুঝে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষিত সাধারণ ছুটি আরও বাড়ানো হতে পারে। এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, লোকজন গ্রামে চলে গেছেন, সেখানে আবার এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয় সে সময়টা হিসেব করে ৯ তারিখ পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হতে পারে।
তবে এ সময় সীমিত আকারে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া এ বছর সারাদেশে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের বাংলা নববর্ষের উৎসবে এ বছর জনসমাগম হয় তেমন কিছু করা উচিত হবে না। তবে ডিজিটাল ব্যবস্থায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় মূল কাজ হলো মানুষকে সচেতন করা। মানুষকে সচেতন করা গেছে বলেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তা লুকানো যাবে না। উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট করাতে হবে। লুকাতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ করবেন না, পরিবারের সর্বনাশ করবেন না। করোনা প্রতিরোধে দেয়া নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলবেন।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সরকারি ও বেসরকারি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে আমাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসহ সব ধরনের সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন অভুক্ত থেকে না যায়।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর আসন্ন বিশ্বমন্দা কাটিয়ে উঠতে দেশবাসীকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরবর্তী বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারো আবাদি জমি ও জলাশয় যেন পড়ে না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জমি আছে সেখানে যে যা পারেন চাষ করুন।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আর দেশবাসীর কাছে তিনি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না, বিচলিত হবেন না।
পাশাপাশি এ পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে যেন সরকারের সহযোগিতা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যথাযথভাবে সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটি করতে গিয়ে যেন এতটুকু দুর্নীতি না হয়। দুর্নীতি অনিয়ম হলে ছাড় দেয়া হবে না। কারণ মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কেউ অর্থশালী সম্পদশালী হবেন সেটি বরদাশত করা হবে না।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী কারো কোনো অভিযোগ যদি পাই তাহলে আমি কিন্তু ছাড়ব না। অভিযুক্ত যেই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। এর মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে আর ১৯ জন সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসাধীন আছেন ২৫ জন।