২২ জুন পর্যন্ত সবার দৃষ্টি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের দিকে। ওই দিন হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদর মোদি। বাইডেন-মোদি বৈঠকে কি আলোচনা হয় তা নিয়ে সবার কৌতূহল ছিল। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু বুদ্ধিজীবী ও তাঁবেদার গণমাধ্যম মুখিয়ে ছিলেন মোদি হোয়াইট হাউজের বৈঠকে বাইডেনের কাছে বাংলাদেশের ওপর ‘নতুন ভিসানীতি’ নিয়ে দেনদরবার করবেন।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারকে টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক পরিম-লে ভারত যে ভূমিকা পালন করেছে এবার তাই করবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দল ও বুদ্ধিজীবীরা শঙ্কায় ছিলেন মোদি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দেনদরবার করেন কিনা! কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে ক্ষততায় আনতে যা যা করা প্রয়োজন তাই করতে হবে’। সকলকে অবাক করে দিয়ে বাইডেনের ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ নীতির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি একমত পোষণ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনিও ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার’ মতের উপর সমর্থন ব্যক্ত করেন। অবশ্য বাইডেন-মোদি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র অটল থাকবে। তবে বাংলাদেশকে ভারত কোন দৃষ্টিতে দেখবে, সেটা তাদের বিষয়। মোদি যখন ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রীয় অতিথি তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতের জন্য ‘অ্যাটমবোমা বিস্ফোরণ’ সমতুল্য মন্তব্য করেন।
তিনি সিএনএনের সাক্ষাৎকরে বলেন, ‘ভারত যদি সংখ্যালঘু মুসলমান-খ্রিষ্টানদের ওপর জুলুম অব্যহত রাখে এবং হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা চলতে থাকে, তাহলে ভারত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে’। বারাক ওবামার বক্তব্যের আগে ৭৫ জন কংগ্রেসম্যান ভারতের মানবাধিকার, সংখ্যালঘু নির্যাতন, গণমাধ্যমের ওপর খবরদারি নিয়ে আলোচনার জন্য জো বাইডেনকে চিঠি দেন। ফলে এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন খাওয়া মোদির রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং সংসদে বক্তৃতা করার গৌরব অর্জন করলেও যুক্তরাষ্ট্র সফর পরিস্থিতি তার অনুকূলে ছিল না। ফলে ভারতীয় রাজনীতিক সুব্রানিয়াম স্বামীর উক্তি ‘মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর অর্জন শূন্য’ নামান্তর হয়ে যায়।
ঠাকুরগাঁওয়ে দরিদ্রদের বরাদ্দকৃত সরকারি চাল প্রদানে যেসব ইউনিয়নে অনিয়ম
সবাই যখন মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের দিকে দৃষ্টি তখন সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংসাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি এতটুকু বলতে পারি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত থেকে এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি আমি বলি, ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। এর আগে সংসদে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু একই অভিযোগ করলেও কেউ তা কর্ণপাত করেনি।
তবে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে জানানো হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ প্রত্যেক দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্র কখনো চায়নি’। এর মধ্যেই পাল্টাতে থাকে দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি ও আবহাওয়া। দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ, ঢাকায় সমাবেশে লাখ লাখ লোকসমাগম এবং ছোট কিছু দল বিএনপির সঙ্গে যুগপথ আন্দোলন করলেও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এতোদিন সরকারের ছাতার নীচেই ছিল। জাতীয় পার্টি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে ‘নাচের পুতুল’ হিসেবে ছিল। আর ইসলামী আন্দোলন পর্দার আড়ালে সরকারের সহায়তায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল।
বিএনপির নেতাদের যখন রাস্তায় নামতে এবং নির্বাচনে প্রচারণায় নামতে দেয়া হয়নি, তখন ইসলামী আন্দোলন নির্বিঘেœ নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে এবং সভা সমাবেশ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বোমা ফাঁটানো বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বাতাসে শোনা যায় জামায়াতকে ৫০ সিট দিতে চায়, জাতীয় পার্টিকে বলছে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করুন আরো বেশি সিট দেয়া হবে। সিট যদি ভাগাভাগি করা হয় তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কি’।
বিএনপির রাজনীতিতে চরম দুঃসময় চলছে: সেতুমন্ত্রী
গতকালও জিএম কাদের বলেছেন, ‘জনগণের হাতে রাজনীতি নেই, দেশের মালিকানাও নেই। রাজনীতি চলে গেছে যারা দেশ শাসন করছেন তাদের হাতে। এই পরিস্থিতিতে এখন বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছি। বিদেশিরা চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই চাপটা যদি তারা সৃষ্টি করে সফল হয় তাহলে জনগণ উদ্ধার হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই।’
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে। দলটির আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম গত শনিবার ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই রূপরেখা ঘোষণা করেন। ঘোষিত জাতীয় সরকারের প্রস্তাবিত রূপরেখায় বলা হয়েছে, ‘আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
জাতীয় সরকার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।’ অথচ রাজনৈতিক অঙ্গনে এতোদিন আলোচনা ছিল অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের নেতাদের মতোই চরমোনাই পীরের দলকে ‘নাচের পুতুল’ এর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।
লকডাউনে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া মানে হয়রানি বাড়বে -মির্জা ফখরুল
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ ছাড়াও দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ১০ জুন ঢাকায় জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছে। যে জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর দিয়ে গত নির্যাতনের ১৪ বছর সুনামি বয়ে গেছে; সেই জামায়াতকে সমাবেশ করতে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ওই দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তে জাতীয় পার্টির সমাবেশ ছিল। জাপার সেই সমাবেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়নে স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হয়। জামায়াতের সমাবেশে দেখা যায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ফুল বিনিময়। সে ফুল বিনিময়ের সচিত্র খবর গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে গুজব সরকার নির্বাচনের আগে জামায়াতকে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণে ১৯৮৬ সালে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে নির্বাচন করেছে এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে। কিন্তু জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাদের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক নেই এবং তারা কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন করবেন না।
এর মধ্যে মাঠে নেমেছে জাতীয় ইনসাফ কমিটি নামের আরেকটি দল। গত ১৭ মার্চ কবি দার্শনিক ফরহাদ মজহার ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি (ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস) নামের সংগঠনটি মাঠে নামার ঘোষণা দেয়। সংগঠনটি গঠনের কারণে শওকত মাহমুদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ এই ইনসাফ কমিটি সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইনসাফ পার্টিতে যোগদানের অভিযোগে গণঅধিকার পরিষদ থেকে ড. রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কার করা হয়। আবার রেজা কিবরিয়া পাল্টা নুরুল হক নূরকে বহিষ্কার করেন। শুধু তাই নয়, নুরের বিরুদ্ধে ইসলাইলের মোসাদ নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ তোলা হয়।
এমনকি ঢাকায় কর্মরত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের এ সংক্রান্ত বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করেছে সরকার সমর্থিত গণমাধ্যমগুলো। শেখ হাসিনাকে খুশি করতে মুখে যাই বলুন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপাতি হাসানুল হক ইনু দলীয় কর্মীদের ধরে রাখতে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র রেজিম চেঞ্জের চেষ্টা করছে। আমরাও চাই জনগণের ভোটের অধিকার। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মেনন বরিশালের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘এই আমি সাক্ষী দিচ্ছিন আমি জনগণ এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই’। কিছুদিন আগে ঢাকায় কর্মরত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূতের অনুষ্ঠানে সাম্যবাদী দলের নেতা দীলিপ বড়–য়া বলেছেন, ‘দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
প্রাচীর নির্মাণে পুরাতন ইট অনিয়মে কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অভিযোগ
গত ৬ জুন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘের মধ্যস্থাতায় বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ বৈঠকে বসতে রাজি আছে।’ ক্ষমতাসীন দলের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুর আলোচনার প্রস্তাব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জোগালেও পরের দিন চাপের মুখে তিনি ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে বলেন, ‘বিএনপিকে কিসের দাওয়াত দেব? জাতিসংঘর অধীনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা নয়’।
২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতা মন্ত্রী-এমপিদের বেশির ভাগই ২ থেকে ৩ বছর প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারেননি। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের সভায় এমপিদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় না যাওয়ায় ভৎর্সনা করেন। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপিকে ৩ বছর মাঠে নামতে দেয়া হয়নি। এমনকি বিএনপি ও জামায়াত ঘরের মধ্যে আলোচনা সভা করলেও তাদের সেখান থেকে গ্রেফতার করা হতো। হাজার হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও সংস্থাটির বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে পাল্টাতে থাকে রাজনীতির দৃশ্যপট। ক্রসফায়ার এবং গুন-খুনের বন্ধের পাশাপাশি বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয়। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করে।
পুলিশি বাধা, ধরপাকড়, যানবাহন ও পথঘাট বন্ধ করে দেয়ার পরও ওই সব সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হন। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজধানীর মোড়ে মোড়ে লাঠিয়াল বাহিনী পাহারা বড়ায়। এমনকি বিএনপির পথযাত্রা বন্ধে আওয়ামী লীগ ‘শান্তি সমাবেশ’ এর নামে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিল মাসে যুক্তিরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ওয়াশিংটনে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন ‘বাংলাদেশের জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য মডেল নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে সারাবিশ্ব মুখিয়ে রয়েছে।’
এরপর গত ২৪ মে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়ে দেন বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে যারাই বাঁধার কারণ হবে তাদের ওপর এই নীতি কার্যকর হবে। তিনি আরো জানান, বিষয়টি ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর প্রশাসনের অভ্যন্তরে অস্থিরতা শুরু হয়। আমলা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের যাদের যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ রয়েছে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া টাকা এখন রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফিরে আসছে। সম্প্রতি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে সুইস বাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকা অন্যত্র সরানো হয়েছে। সরকার নানা প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আনতে দেনদরবার করে। গতকালও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘বিএনপি লবিংয়ের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় চিঠি নিয়ে ঘুরছে।’ তবে তিনি আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজে সরকারও লবিংয়ের জন্য নেলসন মুলিনস নামে পিআর ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। যাদের মাসিক ফি ২০ বা ২৫ হাজার ডলার দেয়া হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লীতে সড়ক বিভাগের জমি দখল তৈরি করছে মার্কেট
এই অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক চালচিত্রে বেশ পরিবর্তন এসেছে। আগে সভা-সমাবেশ করা যেতো না। এখন রাজনৈতিক দলগুলো নিদর্লীয় সরকারের ফর্মূলা দিচ্ছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও সংবিধানের মধ্যে থেকেই নিরপেক্ষ নির্বাচনে ফর্মুলা দিচ্ছেন। আগামী ২৯ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের পর জুলাইয়ের মাঝামাঝি রাজপথের রাজনীতিতে নতুন গতি আসতে পারে। কারণ যতই দিন গড়াচ্ছে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারিখ ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে একাট্ট হচ্ছে।
আরএম/নিউজনেটটুয়েন্টিফোন ডটকম