নিউজ ডেস্কঃ নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করাই আরডিসি নাজিম উদ্দীনের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডিপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন নির্যাতনের শিকার মানুষেরা।
নিরীহ মানুষদের ওপর নির্যাতন চালানো আর অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা তার নেশা হয়ে উঠেছিলে বলে জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরে তার নির্যাতনের শিকার হওয়া কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার অধিবাসী বিশ্বনাথ দাসের পরিবার প্রেস ক্লাবে তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বাড়ির সবাইকে মারধর এবং অকথ্যভাষায় গালগিালাজ করার পর বিশ্বনাথ দাসকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১ বছরের কারাদণ্ড এবং মজনু নামে আরেকজনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল।
এর পরদিন মজনুকে জামিন দিলেও বিশ্বনাথকে জামিন দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া দণ্ডের কোনো নথিপত্রও দেয়া হয়নি। ফলে গত ২০ দিন ধরে কারাগারে আছেন বিশ্বনাথ দাস।
বিশ্বনাথের কাকা স্বপন চন্দ্র বর্মন, স্ত্রী পার্বতী রানী দাস, বোন শুকলা দাস ও ভাই বাবলু নম দাস সংবাদ সম্মেলনে জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান বিশ্বনাথ নাথ পেশায় একজন জেলে। সে এবং পার্শ্ববর্তী পঞ্চয়েত পাড়ার আঙ্গুর ও মোখলেছ মিলে উন্মুক্ত জলাশয় গিরাই নদীর দেবীকুড়ায় বাঁধ দিয়ে মাছের পোনা ছেড়েছিলেন। সেখানে মাছের পোনা ছাড়ার আইনগত কোনো বাধা নেই। তারপরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাঁধ কেটে দিয়ে পাহাড়ার ঘর ভেঙে তছনছ করে লাল পতাকা টানিয়ে দেন নাজিম উদ্দীন।
এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে তাদেরকেও বাড়িতে ঢুকে মারধর করে বিশ্বনাথকে ধরে নিয়ে যান। এ সময় বিশ্বনাথের স্ত্রী, মা, কাকা এবং ভাইকে মারপিট করা হয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এর পরপর আঙ্গুর এবং মোখলেছের বাড়িতে গিয়ে তাদের না পেয়ে আঙ্গুরের বাবা মজনুকে ধরে নিয়ে যান।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতনের ঘটনার মূল হোতা জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উনি-২ অধিশাখার উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার কর্তৃক সোমবার স্বাক্ষরিত এই আদেশের প্রজ্ঞাপনটি দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসে।
সেই সাথে নতুন ডিসি হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পাশাপাশি আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পরবর্তী পদায়নের জন্য তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব কে এম আর আমীন কর্তৃক রোবার (১৫ মার্চ) স্বাক্ষরিত এতদসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে পৌঁছে বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাফিজুর রহমান।