• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

নাগরিক ভাবনা- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা এবং জাতীর প্রাপ্তিযোগ -অ্যাডভোকেট আবু মহী উদ্দীন

সাংবাদিকের নাম / ৫১ জন দেখেছেন
আপডেট : শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

ক্রীড়া ও সংস্কৃতির অধিক্ষেত্র সর্বত্র। স্কুল কলেজ ,মাদরাসা , ক্লাব, পাড়া. মহল্লা ছাত্র ছাত্রী , সাধারণ মানুষ , ছেলে বুড়ো সবাই খেলে। মানব শিশূ জন্মগ্রহণ করলে তাকে কোন জ্ঞানের কথা বলা হয়না। খেলানো হয় , সুর শেখানো হয়। শিশু একটু চোখ মেলে দেখা শিখলে তাকে উপহার দেওয়া হয় খেলনা। আয়োজন করা হয় গান বাজনার। স্কুলের লেখাপড়া শুরু হয় প্লে ক্লাশ থেকে। সেখানে খেলাধুলা আর গান বাজনা। খেলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে কোন নির্ধারিত জনসংখ্যা লাগেনা। একজনেও তার চর্চা করা যায়। হাঁটা একটি খেলা । গান গাওয়াও ব্যক্তিগত বিষয়। দুটি কাজই একজনে বা দলগতভাবে করা যায় তবে উপভোগ করে আনন্দ লাভ করতে পারেন অনেকে। শরীরিক এবং মানষিক বিকাশের জন্য ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি চর্চার কোন বিকল্প আজো আবিস্কার হয়নি। জাতীয় স্বাস্থ্য গঠনে খেলার যেমন প্রয়োজন তেমনি মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন জাতি গঠনে সংস্কৃতি চর্চার প্রয়োজন অপরসীম।
খেলাধুলা কী উপকার করে এ বিষয়ে ব্যখ্যার কোন প্রয়োজন নাই। বর্তমান সময়ে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা বা এর কার্যকারিতা রচনা লেখার মধ্যেই সিমাবদ্ধ হয়েছে। সংস্কৃতি চর্চা বা খেলার মুল জায়গা স্কুল , সেখান থেকে এসব নির্বাসিত বিভিন্ন কারনে। লেখাপড়ার পদ্ধতি পরিবর্তন , কোচিং বানিজ্যের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অহেতুক প্রতিযোগিতার কারনে ছেলেমেয়েদের কোন অবসর নাই। স্কুলের ক্লাশে একজন শিক্ষক ৩৫/৪০ মিনিটে কার কী খোজ নিবেন, কার পড়া ধরবেন , কাকে মুল্যায়ন করবেন , কাকে বুঝাবেন , কার ভুল সংশোধন করবেন । আগে প্রাইভেট পড়াটা সম্মানের ছিলনা। এখন এটা ষ্টেটাস সিম্বল। যিনি যত দামী শিক্ষক দিয়ে তার ছেলেমেয়েদের যত বেশী প্রাইভেট পড়াবেন তিনি তত গণ্যমান্য। স্কুল করার সময় কাগজে কলমে স্কুল কর্তৃপক্ষ যত শর্ত পুরন করে, সে হিসাবে সকল বিদ্যালয় ১টি করে স্বয়ং সম্পুর্ন প্রতিষ্ঠান এবং অবশ্যই খেলার মাঠ থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা আলাদা। ভালো স্কুলের ভর্তি পরিক্ষায় যে ছাত্র উত্তীর্ণ হতে পারেনা তার অভিভাবকের কোন সামাজিক অবস্থান থাকবেনা। ফলে আমাদের শিশুদের জীবন থেকে আনন্দময় শৈশব ছিনতাই করে চলে ভর্তিযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার কসরত চালু হয়েছে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের কথা যখন আমরা বলতে চাই , তখন এর দীর্ঘ ধারাবাহিকতা স্মরণে আনা জরুরী হয়ে ওঠে। শাসকগোষ্টির কুপমন্ডক সাংস্কৃতিক বর্বরতার বিরুদ্ধে উদার অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী চেতনার বিভিন্ন প্রকাশ হয়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক সংগ্রামের হাতিয়ার। তাই ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশত বার্ষিকী পালনে যখন বাধা আরোপ করা হয় , যথার্থভাবে শাসকগোষ্ঠী দ্বারা রবীন্দ্রনাথ চিহ্নিত হন পাকিস্তানের ভাবাদর্শের বিরোধী কবি হিসাবে। তখন জন্মশতবর্ষ উদযাপনের যে কোন আয়োজন হয়ে ওঠে প্রতিরোধের প্রবল অবলম্বন। এভাবে ষাটের দশকে যে সাংস্কৃতিক জাগরণের সূচনা ঘটে , তা একদিকে বাঙ্গালী সংস্কৃতির ঐতিহ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করে এবং পাশাপাশি শৈল্পিক নবসৃজনে ব্রতী হয়। শিল্প সৃজনের প্রভাবে জনচিত্ত ¯œাত ও আলোড়িত করে দেখতে দেখতে পাকিস্তানী তমশা দুর হয়ে বাঙ্গালী সংস্কৃতির জাগরন বিস্তৃত ও অমোঘ হয়ে উঠতে থাকে। চল্লিশের দশকে গণনাট্য সংঘ ও গণসংস্কৃতির ধারা বলবান হয়েছিল শিল্পীদের সৃজনস্পর্শে। ষাটের দশকে বন্দি পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী সংস্কৃতির সমগ্রতায় অবগাহন করে সৃজন মুখরতা একে জোগালো নুতন শক্তি।
বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধ তাই যেমন ছিল গণসংগ্রামের ধারাবহিকতা , তেমনি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের প্রতিফল। আর তাই দেখা যায় একাত্তরের মার্চ মাসে গণহত্যার সুচনায় পাকিস্তানী বাহিনী কয়েকটি প্রতীকী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল , কামানের গোলায় বিদ্ধস্ত করেছিল শহিদ মিনার , কেটে ফেলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন প্রাঙ্গনের ছাত্র সমাবেশস্থল বটতলার বটবৃক্ষ এবং মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রমনা কালীমন্দির। এভাবে প্রকাশ করেছিল সংস্কৃতিগত ও জাতিগত ঘৃণা ও বাঙ্গালীর প্রতিরোধ সমুলে বিনাশের বাসনা।
কিন্তু যার যা আছে তাই নিয়ে শিল্পী ,সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিরোধ রচনা করেছিলেন। দুই ধারায় প্রবাহিত হয়েছিল এই সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন যে বিপুল সংখ্যক শিল্পী সাহিত্যিক , সংস্কৃতিকর্মী তাঁদের অনেকে অচিরে নিজেদের সংগঠিত করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শিল্পী সংস্থার মাধ্যমে গান , নাটক , কবিতা কথিকার মধ্য দিয়ে সৃজন সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন এবং গোটা দেশবাসীর কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন।
সংস্কৃতির সংগ্রাম যখন মুক্তিযুদ্ধে উপনিত হয় , তখন এর প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে তাৎপর্যময় হয়ে দেখা দেয় । অতিক্রান্ত পথের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা বুঝতে পারি , সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিভ্রান্তি মোচন করে জাতি কীভাবে আপন সত্বা পুনরাবিস্কার করে জাতি চেতনায় সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হতে পারল। ফলে বাঙ্গালীর জাতীয় সংস্কৃতি চেতনা বড়োভাবে লালন করেছিল প্রতিরোধের চেতনা ও রক্তাক্ত আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও কখনো পরাভব স্বীকার করেনি। সংস্কৃতির এই সংগ্রামতো মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত পরিণতি খুজে পায় না বরং ভিন্ন পরিস্থিতিতে নুতন ধারায় বিকশিত হওয়ার উপায় তাকে খুজে নিতে হয়। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতি বিচার তাই নবতর দায়িত্বের নিরিখে দেখা প্রয়োজন।
আধুনিক বিশ্বে নিত্যনতুন আবিষ্কার মানব জীবনকে একদিকে যেমন দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিময়তা, অন্যদিকে তেমন সঞ্চারিত করেছে হতাশা ও উদ্বেগের। পুরাতন সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে দিনে দিনে, নতুন মূল্যবোধও সবসময় গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই বর্তমান বিশ্বসভ্যতা যে কয়টি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন, মাদকাসক্তি তার অন্যতম। মাদকের নিষ্ঠুর ছোবলে অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু তাজা প্রাণ এবং অংকুরেই বিনষ্ট হচ্ছে বহু তরুণের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্য তরুণ সমাজের এক বিরাট অংশকে অকর্মণ্য ও অচেতন করে তুলেছে, অবক্ষয় ঘটাচ্ছে মূল্যবোধের। ফলে সুস্থ সামাজিক বিন্যাস, সুন্দর পরিবেশ ও জাতীয় স্থিতিশীলতা এক বিরাট হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। মাদকাসক্তি সমস্যা আমাদের দেশের শিক্ষার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে কারণ মাদসক্তির প্রভাবে অনেক মেধাবী ও ভালো ছাত্রছাত্রী মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তাদের সুন্দর ও সুস্থ ছাত্রজীবনের অবসান ঘটিয়ে ক্রমে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মাদক , সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের বিষাক্ত থাবা জনগোষ্ঠি বিশেষত: তরুন সমাজেকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে, যদি তরুনদের সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা না করা যায়। একথা সত্য তরুনদের আকর্ষিত করার মতো কর্মসুচি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররা ছাত্র সংসদের ফি দেয় কিন্তু সংসদ কার্যক্রম নাই। সাংস্কৃতিক চর্চা নাই, নির্বাচন নাই। ফলে প্রতিভার বিকাশও রুদ্ধ , নের্তৃত্বের গুনাবলী অর্জিত হচ্ছেনা। যোগ্যতা থাকা সত্বেও কাংখিত কর্মসংস্থান না থাকায় হতাশা ভর করে। হতাশা থেকে মুক্তির জন্য কিশোর তরুনরা নেশাগ্রস্থ হচ্ছে। নেশাসক্ত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংশের দিকে।
সন্ত্রাসী কার্যক্রম আমাদের আর একটি সমস্যা। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আমাদের তরুন প্রজন্মকে আকর্ষিত করে বিভিন্ন কারনে। সুস্থ্য বিনোদন , ক্রীড়া , সাংস্কৃতিক ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা বাধাগ্রস্থ হওয়ার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চর্র্চার অভাব , সমন্বিত শিক্ষার অভাবে শিক্ষার্থীদের পিঠে পুস্তকের বোঝার ওজন নির্ধারণে হাইকোর্টকে সিদ্ধান্ত দিতে হয়। সুকুমার বৃত্তির চর্চা বা প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। প্রাইভেট , কোচিং জিপিএ ৫ এর জন্য মা বাবারা অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পুত্রের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য পিতা পরিচিত হন এবং তিনি গর্ব বোধ করেন। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা বা রাজনৈতিক উচ্চাকাংখা থেকে উৎসাহিত হচ্ছে। দেশে দেশে প্রভাবশালীরা তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য সন্ত্রাসী দল তৈরি করে। আর দেশীয় রাজনৈতিক দলসমুহের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় তৈরি হচ্ছে সন্ত্রাসী গ্রæপ। রাজনৈতিক নের্তৃত্ব তাদের নিজেদের প্রয়োজনে সন্ত্রাসীদের পৃষ্টপোষকতা করে থাকে।
জঙ্গীবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। সামরাজ্যবাদি পৃষ্টপোষকতা এবং ধমীয় উন্মাদনা থেকে , ধর্মের অপব্যখ্যার ফলে জঙ্গীবাদের উৎপত্তি। জঙ্গীবাদের উত্থানে মানব সভ্যতা হুমকীর সস্মুখীন। সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদের পার্থক্য থাকলেও স্বার্থের ব্যপারে তাদের মিল আছে। এরা কোন রাজনৈতিক দলের অনুগত নয়। এদের কোন দল বা আদর্শ নাই। এরা সব সময়ই ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মুলত: ব্যক্তি , গোষ্ঠি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা , সুবিধা আদায় করার জন্য করা হয়। এসব অধিকাংশই প্রভাবশালী মহল , ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের পৃষ্টপোষকতায় প্রভাব বিস্তারের জন্য হয়ে থাকে। আর জঙ্গীবাদের উত্থান সা¤্রাজ্যবাদীদের প্রয়োজনে ধর্মীয় উন্মাদনা এবং ধর্মের অপব্যখ্যা থেকে তৈরি করা হয়। আই এস বা তালেবান এই জাতীয় জঙ্গী গোষ্ঠি।
বর্তমান সময়ে বাণির্ং ইসু মাদক , সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। রাষ্ট্রশক্তি এদের নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে বটে তবে শিক্ষা এবং জনসচেতনতা ছাড়া তাদের নিয়ন্ত্রন আপাতত সম্ভব নয় সে কথা জোর দিয়ে বলা যায়।
মাদক , সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মুলে বিকল্পের খোজ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক শক্তি দিয়ে যেমন নিয়ন্ত্রনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে তেমনি শিশু কিশোররা যাতে সন্ত্রাস , মাদক জঙ্গীবাদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ না পায় তেমন ব্যবস্থা করতে হবে। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন শিশু ,কিশোর ,তরুনের মানষিক বিকাশ যাতে সুস্থ্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চালু করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত ক্রীড়া , সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংগঠিত করতে পারলেই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই সব চর্চা এখন বিচ্ছিন্নভাবে না করে কিশোর তরুনদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় চর্চা করতে না পারলে তা সহজ হবেনা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রীড়া বিষয়, চর্চা আকারে না থাকলেও জাতীয় স্কুল ক্রীড়া নামে ১টি কর্মসুচি আছে। এতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামুলক হলেও মুলত: বিষয়টি ঐচ্ছিক। অংশগ্রহণ না করলে কোন জবাবদীহির ব্যবস্থা নাই। যদি অংশগ্রহণ করেও তা হলে উপজেলা পর্যায়ে ১টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হলে সেই শিক্ষার্থীর জন্য বছরে ১ ঘন্টার ঐ একটি ম্যাচই ভাগে পরে। তাও আবার ১০০০ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ১১ জন। এটাকে চর্চা বলা যাবেনা। কলেজের অবস্থাতো ভিন্নরকম। বাংলাদেশে ১ টি চাকুরী আছে যার কোন কাজ নাই। সেটা হলো কলেজের শারীরিক শিক্ষক। তার বই নাই , ক্লাশ নাই , রুটিন নাই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে কলেজের শারীরিক শিক্ষকের কোন কাজ নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না হলেও বিশেষত: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষকের পদ আছে লোকও আছে। তিনি সমাজ বিজ্ঞান বা ইতিহাস পড়ান। বছরে কোন প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়ার আয়োজন হয় তাও কয়েকজন শিক্ষার্থী একদিনই খেলে। সার্বজনীন ক্রীড়ার কোন ব্যবস্থা নাই।
সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড তো আরো নাজুক অবস্থায় আছে। এসব বিষয়ে কোন শিক্ষক নাই। দেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্টান আয়োজনের লক্ষ্যে কিছু সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলে। সেখানে ২/৩টি বিষয়ের প্রতিযোগিতা হয়। ঐ পর্যন্তই। শিক্ষক / শিক্ষার্থীদের হাতে সাহিত্য চর্চার সময় নাই। আর বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে প্রতিষ্ঠানগতভাবে সাহিত্য চর্চার সুযোগ সীমিত। অভিভাবক আগ্রহী হলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কেউ এক আধটু চর্চা করে থাকে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরনের বিষয় গভীরভাবে ভাবে ভাবতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমিক এবং ধারাবাহিকভাবে সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের রুটিন থাকবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক সাংস্কৃতিক চর্চা ও প্রতিযোগিতার বাধ্যতামুলক আয়োজন করতে হবে এবং উপজেলা , জেলা , বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার নিয়মিত আয়োজন থাকবে। শিক্ষা বিভাগ এই বিষয়ে কার্যকর তত্বাবধান , মনিটরিং করার জন্য আলাদা কর্মকর্তা , কর্মচারী নিয়োগ করবেন। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে প্রতিবছর সেরা পারফরমার প্রতিষ্ঠানকে বিশেষভাবে পুরষ্কৃত করা হবে।
সুতরাং উপসংহারে বলা যায় , সকল শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির ধারাবাহিক চর্চার সুযোগ থাকবে , ব্যবস্থা থাকবে , শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিষয়ে অংশগ্রহণ করবে। ধারাবাহিক মুল্যায়ন পদ্ধতি চালু থাকবে। মুল্যায়ন শেষে নির্ধারিত মানে পৌঁছাতে পারলে সেই শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম ব্যবস্থা চালু রাখতে পারলে বাঙ্গালী জাতির মুক্তি সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী সাহিত্যিক , ক্রীড়াবিদরা যে ভুমিকা পালন করেছিল , যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল , যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য আমরা আকাংখ্যা পোষন করছি , সেই বাংলাদেশ আমরা পাব এবং আমাদের সন্তানরা মাদক ,সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরবেনা এ আশাবাদ পোষন করা যায়।


এধরনের আরও সংবাদ

Editor: Ataur Rahman
News editor : Joherul Islam
email: newsnat24@gmail.com
Phone: 01717253362, 01744367842
N.C Road, Thakurgaon.