• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

নাগরিক ভাবনাঃ  করোনা ও আমাদের শিক্ষার সম্ভাবনা-আবু মহী উদ্দীন

সাংবাদিকের নাম / ৭৫ জন দেখেছেন
আপডেট : সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১

শিক্ষা বিশেষজ্ঞগণ করোনা জনিত কারণে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বা পথ আবিস্কারের প্রানান্ত চেষ্টায় গলদঘর্ম হচ্ছেন।  করোনা সমস্যা সমাধানের আমাদের কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা। বিদেশীরা ভুল ভাল করছিল আর আমরা তা থেকে শিক্ষা নিচিছলাম। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো আমরা শিক্ষা থেকে শিক্ষা নিইনা। সরকার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারে আমাদের মতো সদস্য আছে , যারা বাস্তবতাকে গিলে খাওয়ার  চেষ্টা করছে। কয়েকজন ধরা পড়েছে। তাদের বিচার নিয়ে বরাবরের মতো শংশয় আছে। সমালোচনা আছে। আদৌ বিচার হবে এ গ্যারান্টি দেওয়া যায়না। কেননা যারা সবচেয়ে বেশী টাকাওয়ালা , প্রভাবশালী  তারা দেশের হাসপাতালের সর্বোচ্য সুবিধা ভোগ করেন। রফিকুল আমিনের , ক্যাসিনো স¤্রাট নইসমাইল সম্রাটের  কি ক্ষমতা , তারা  জেলখানা থেকে হাসপাতালে আয়েশি জীবন যাপন করছেন আর ব্যবস্যা চালিয়ে যাচ্ছেন একযুগ ধরে। তাদের শরীরের এতো সমস্যা দেশের ডাক্তাররা না পারলে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেই হয়। রফিকুল আমিনের মতো দুবৃত্ত পোষার জন্য দেশের অর্থব্যয় তো অনুমোদন করা যায়না। আর যে ডাক্তার এতদিন ধরে তার চিকিৎসা করাতে পারেননা এই সব ডাক্তারের বোঝা আমরা কেন বহণ করবো? রফিকুল আমিন  বাইরে থাকলেতো ওয়ার্কশপ সেমিনার করে দেশ মাতিয়ে দিতেন।  ক্যাসিনো স¤্রাটরা এতটাই‘ অসুস্থ্য’ শরীর নিয়ে কিভাবে ক্যাসিনোর মতো ঝুকিপুর্ন ব্যবস্যা চালাতেন?  দাপিয়ে বেড়াতেন। প্রশ্নগুলি মৌলিক। এই কারণে মৌলিক যে কেবলমাত্র কারা রক্ষীদের জ্ঞাতসারেই এই অপকর্ম হয়। ওরা তো শিফটিং ডিউটি করে। ওরাতো পার্মানেন্ট নয়। তাহলে এটাতো বোবারাও বুঝতে পারবে যে কলকাঠি নড়ে অন্য জায়গা থেকে। জেল সুপার রফিকুল আমিনদের মতো ভিভিআইপি  বন্দীর অবস্থান জানবেনা এটাতো ভয়য়ঙ্কর অপরাধ।
বলছিলাম শিক্ষা বিভাগের বিশষজ্ঞগণের কথা। তারা মাসের পর মাস গবেষণা করে গলদঘর্ম হচ্ছেন , শিক্ষা , শিক্ষার্থীদের জন্য কি করা দরকার ? কিভাবে তাদের রক্ষা করা যাবে?  তবে কোন কুল কিনারা করতে পারছেননা। একটু খোজ নেওয়া যায় কিনা তাদের ছেলেমেয়েরা কতজন এদেশের পড়াশোনা করছে। নাকি বেগম পাড়ায় বা অন্য কোথাও  এ. ও. লেভেল পড়ছে ? তাদের তো কোন সমস্যা নাই। সাধারণ মানুষের সন্তানদের করোনার ডিপোতে আনার জন্য যতটা উদগ্রীব , সে সময় তাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় কি করে , তাদের কতভাগ এদেশে পড়ে তা জানা জরুরী।
মন্ত্রণালয় বিষেশজ্ঞরা ৭/১৫ দিন পর পর একটা করে বাণী দিয়ে কর্মদক্ষতা  এবং কর্মতৎপরতা প্রমান করার স্বাক্ষর রাখছেন। অনলাইন ,অফলাইন  , এ্যাসাইনমেন্ট , শিক্ষকরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে পড়াচ্ছেন অনেক বিষয়। এসবের জন্য অর্থ ব্যয় হচ্ছে নিশ্চয় প্রচুর। বাজেটের টাকাতো খরচ করতে হবে। জুমে মিটিং করতেও গাড়ীর ঘোড়ার জন্য নাকি তেল খরচ হচ্ছে, নাস্তার খরচ হচ্ছে,কনটিনজেন্সি খরচ হচ্ছে। সরকারি কোন মিটিংয়ে নাস্তা ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে জাতির কি সর্বনাশ হতে পারে পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। এতে লাভ ছাড়া লোকশান নাই। সচিবালয়ে মিটিংয়ের নাস্তা নিয়ে আরব্য উপন্যাস রচনা করা যাবে। অদ্ভুত ব্যপার , চাকুরী করেন , বেতন ভাতা নেন আবার দয়া করে মিটিং করে দেওয়ার জন্য ‘সিটিং’ এলাউন্স নেন। বিবেক বলে কোন একটা জিনিষ থাকলে সমস্যা কোথায় ?
আচ্ছা এতো এতো জ্ঞানী ব্যক্তি মন্ত্রনালয় চালালেও এর কোন কুল কিনারা করতে পারছেননা, কেন , নাকি তাদের মেধায় কুলাচ্ছেনা , নাকি মোক্ষম প্রস্তাবটা খুজে পাচ্ছেননা। নাকি প্রজেক্ট তৈরিতে ব্যাস্তো।   সভ্য দেশে হলে এরা সম্মানের সাথে চাকুরী ছেড়ে বিদায় হতো অথবা কর্তৃপক্ষ তাদের বোঝা  বহণ করতো না। আমাদের দেশে বিষয়টাতো আলাদা। যত অচল মাল তত তার দাম বেশী।
অনলাইন ক্লাশের আয়োজন করে অনেক ব্যয় করা হয়েছে। প্রাইমারী স্কুলে নিন্মমানের থার্মোমিটার , ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র জোর করে বিক্রি করার অভিযোগ থাকলে উড়ে দেওয়া যাবেনা। এগুলো পরীক্ষা  করলে দেখা যাবে সিল ছাপ্পর এক হলেও বিভিন্ন মানের জিনিষ গছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন দোষ হবে শিক্ষকদের ,  ওরা ব্যবহার করতে জানেনা বলে। শিক্ষা বিভাগ ও সসম্ভবত ‘ মিঠু’ চক্রের বাইরে নাই। দোকানে পরীক্ষা  করে দেখুন  একই জাতের জিনিষ বিভিন্ন মানের  আছে। প্রতিটার কোয়ালিটি আলাদা। এ বিষয়ে কত কোটি টাকার ব্যবস্যা  হয়েছে মন্ত্রনালয়ের কেউ জড়িত না থাকলে কি সম্ভব ?
এ সবের কোন তদন্ত কি কোন দিন হবে?
এই সব  অন্য কথা । শিক্ষা ব্যবস্থা ও জন্য সরকার , অর্থমন্ত্রী , পরিকল্পনা মন্ত্রী , শিক্ষা মন্ত্রী , , আইসিটি মন্ত্রী মিলে কয়েকঘন্টা সময় দিলেই বড় একটা সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। অনলাইন ক্লাশ চালুর সাথে সাথে আমাদের বুদ্ধিজীবী টকশোজীবীরা হৈ ্হৈ করে করে উঠলো মোবাইল সেটের সমস্যা , অর্থের সমস্যা , নেটের সমস্যা আরো কতকি । মানে ওটা করাই যাবেনা। কি করা যাবে সে কথাও তারা বলেননা।  শুধুই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা চললো, এখনো চলছে ভবিষ্যতে ও  চলবে। পিপে পিপে নশ্যি শেষ হবে সমাধান খুজে পাওয়া যাবেনা।  কবে হবে জানিনা।
সরকার যে কাজটা করলে ভালো করতো তা হলো একটা ডাটাবেজ। সারা দেশের সকল ছাত্রের একটা নির্ভূল ডাটাবেজ তৈরি করা সম্ভব ছিল। এখনো সময় আছে। এই ডাটাবেজ ধরে কার কি সহায়তা নিধারিত হলে সহায়তা করা সহজ হয় বরং  সে মোতাবেক দরকারি সহায়তা  দেওয়া যেতো।  ছেলেমেয়েরা স্কুলের বেতন দেয় , গাইড বই কেনে , প্রাইভেট পড়ে। সেই টাকা দিয়ে মোবাইল সেট কিনবে। মোবাইল সেটের দামে সরকার ভর্তুকী দিবে বা কমে দিবে। আর  এখনকার শিক্ষার্থীরা প্রায় সকলেই  এনড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করে। আর একটা জরুরী কাজ , তা হলো এই মোবাইলগুলোতে মেগাবাইট দেওয়া। মেগাবাইট/ ওয়াই ফাই দিবে সরকার। তাহলেই কাজটা ৯০% হয়ে যায়।  অনলাইন ক্লাশ হবে। ক্লাশ কে কতটুকু করে বা করেনা তার রেকর্ড মোবাইলেই থাকবে।
করোনা এক সময় শেষ হবে। শেষ হলে শিক্ষকরা সমস্বরে দাবী তুলবেন তাদের আগের ট্রেনিং সবাই ভুলে গেছেন। আবার প্রকল্প তৈরি হবে। অর্থহীন ব্যয়বহুল ট্রেনিং আবার শুরু হবে। টাকার খরচের মচ্ছব হবে . ফলাফল আগের মতোই থাকবে। এই দেড় বছর আমরা শর্ত দিতে পারতাম , শিক্ষকগণ নিজ দায়িত্ব আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। করোনা শেষে তাদের পরীক্ষা নিয়ে গ্রেড করে প্রমোশন ডিমোশনের ব্যবস্থা  করা যেতো। তাতে একট শিক্ষিত আইসিটিতে দক্ষ ম্যান পাওয়ার গড়ে উঠতো। চাকুরী  দিয়ে ট্রেনিং না করে চাকুরীর আগেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকতে তা কাজে লাগাবনা কেন? শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে কর্মকর্তাদের হাত খরচ , গাড়ীর তেল খরচ ,ভ্রমন খরচ , কনটিনজেন্সির খরচ দিয়েই এই কাজ গুলো করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে শিক্ষার জন্য এটা ব্যয় নয় বিনিয়োগ। কেননা এটা শতগুনে বিকশিত হয়ে জাতির কাছে ফিরে আসবে।
এবার পরীক্ষা পাশের প্রসংগ। পরীক্ষা  না দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্মানের  পর্যয়ে ফেলা ঠিক নয়। দুনিয়ার সভ্য দেশে বই খুলে পরীক্ষা দেওয়া হয়। কেন সেই ব্যবস্থাটা চালু করা কি অসম্ভব ? কেন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যাবেনা ? অবশ্য বেরসিক সরকার কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমন  প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ইস কত বড় মাপের ‘বেরসিক’একটা কাজ করেছে অর্থমন্ত্রী।
বর্তমান সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে একটা ভালো কাজ করছে। ইউনিক আইডি কার্ড সিস্টেম। এর ফলে নির্ভূল একটা ডাটা তৈরি হবে যেটা জাতির ভিত্তি রচিত হবে।  নির্ভূল আইডি কার্ড ,নির্ভূল তথ্যভান্ডার তৈরি হবে। এই কাজটা মাধ্যমিক , বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে করা কি একেবারেই অসম্ভব নাকি, অপ্রয়োজনীয় ?  আসুননা বিষয়টা নিয়ে এভাবে ভাবিনা কেন ?
স্কুল কলেজে ক্লাশ নেয় শিক্ষকরা , কেউ দেখতে পায়না। আর অনলাইন ক্লাশ থেকে যায়। এতে একজন শিক্ষক তাকে উন্নত করার তাগাদা অনুভব করে।  অনলাইন ক্লাশ শুরু  করে অনেক শিক্ষকের মান বেড়েছে। এটা ভালো করে চালু করলে শিক্ষকরা আরো ভালো করতে পারবে? সারা দেশে আইসিটির এটা চর্চা  শুরু হবে। বরং এই সুযোগটা আমরা হাতে পায়ে ঠেলে দিচ্ছি। এখনো সময় আছে। একটু চিন্তা ভাবনা করে কাজ টা শুরু কলে দিলেই কিছু সীমাবদ্ধতা ধরা পড়বে। সমাধান করা যাবে। হোকনা চালু। শুরু করলে সমস্যা দেখা দেবে সমাধানের রাস্তাও  খুজে পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদের টিকা না দিয়ে স্কুল কলেজ খোলা কোন মতেই ঠিক হবেনা। আমাদের সমস্যা হলো সব বিষয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকেই ভাবতে হয়। বাঁকীরা সেই পাকিস্তান আমলের‘ উজীরে খামাখা’। আমার ধারণা ওরা না থাকলেও চলবে। তাদের থাকার  প্রয়োজনীয়তা তো তাদেরই সৃষ্টি করতে হবে।


এধরনের আরও সংবাদ

Editor: Ataur Rahman
News editor : Joherul Islam
email: newsnat24@gmail.com
Phone: 01717253362, 01744367842
N.C Road, Thakurgaon.