• মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

ডাক্তারদের চেম্বার কেন বন্ধ? ঠাকুরগাঁওয়ের এক চিকিৎসকের উদাহারণ

সাংবাদিকের নাম / ৫৮ জন দেখেছেন
আপডেট : শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০

নিউজ ডেস্কঃ তার ফেইসবুকে দেয়া তার ব্যাক্তিগত মতামত হুবহু তুলে ধরা হলো- খুব ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা সবার কাছে পরিস্কার করি। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজ করি, আমার যাওয়া আসা থেকে শুরু করে প্রতিদিন যত লোকের সংস্পর্শে আসতে হয় তাতে আমার কতটা করোনার ঝুঁকি আছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাদের সচেতনতা আছে তারা জানে ডাক্তাররা হচ্ছেন সুপার স্প্রেডার মানে হল একজন ডাক্তার সংক্রমিত হলে তার থেকে অনেক রোগী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চেম্বারে এই দেশের মানুষকে সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখে বসাবেন সেটা অলীক কল্পনা মাত্র। তার মানে হলো আপনার চেম্বার খোলা থাকলে সেটা হবে এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য একটা মারাত্মক হটস্পট।
যারা কথা বলেন তারা না বুঝে বলেন সেটা আমার মনে হয় না। কিন্তু সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার সেই গতানুগতিক কুপ্রবৃত্তি থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারছেন না, সেটাই সবচেয়ে দুঃখজনক। এই ক্রান্তিকালেও যদি মানুষ তার সুকুমার বৃত্তিগুলোর প্রকাশ না ঘটায়, তবে আর কবে!
আমি চেম্বার বন্ধ রেখেছি আমার রোগী এবং তাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য। আমি অর্থলোভী হলে চেম্বার খোলা রাখতাম, কারণ আমি তো হাসপাতালে রোগীর সংস্পর্শে এসে এমনিতেই ঝুঁকিতে আছি। এই সময়ে সবার উচিত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের কাছে না যাওয়া। আমি সবার মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে আমার রোজগারের রাস্তা বন্ধ রেখেছি।
এটা পালিয়ে যাওয়া বা কোন স্বার্থপরতা নয়, এটা এক ধরনের ত্যাগ স্বীকার এবং সময়ের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত।
পুনশ্চঃ এটা খুব গভীরভাবে চিন্তা করে একটা অনড় সিদ্ধান্তে পৌঁছার বিষয়। আরও অনেকগুলো অকাট্য যুক্তি আমি দেখাতে পারবো যেসব কারণে এই মুহূর্তে চেম্বার বন্ধ রেখে আমাদের মূল কর্মস্থলে আরো বেশী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
এই মহামারী কোন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়, এক অনিশ্চিত ম্যারাথন। শুধু স্বাস্থ্যকর্মী নয়, আমাদের সবার শক্তি সঞ্চয় করে বুঝে-শুনে লড়তে হবে। হঠাৎ করে সর্বশক্তি নিয়োগ করে লড়তে গেলে পরাজয় অবধারিত, আর সুচিন্তিত কৌশলে আগালে অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার পরে হয়তো কাঙ্ক্ষিত বিজয় আসবে।
আসুন, ভুল না বুঝে, মিথ্যে সন্দেহের বশবর্তী না হয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, তাদের মনোবল ধরে রাখতে উৎসাহ দিন – তারা আপনার এবং আপনার প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হবে না।
তিনি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন পদে দায়িত্বে রয়েছেন।


এধরনের আরও সংবাদ