নিউজ ডেক্সঃ ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর)। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে আত্মীয়তা-স্বজনপ্রীতি রখার নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্যও দেন তিনি।
অথচ বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর ঘোষিত ২৪ সদস্যের কমিটিতে ৮ জনের পরিচয়ে দেখা গেছে যারা দু’জন করে পরস্পরের নিকট আত্মীয় । ঘোষিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় ও সহ-সভাপতি শেখর কুমার রায় দুই ভাই। সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান খোকন ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আয়েশা সিদ্দিকা স্বামী-স্ত্রী। যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আসম গোলাম ফারুক ও মোস্তাক আলম সম্বন্ধী-ভগ্নিপতি এবং সদস্য দবিরুল ইসলাম ও সাংঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সম্পর্কে বাবা-ছেলে। জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত নেতা-কর্মীদের দলের কর্মীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী ছেঁকে ছেঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া ও কমিটি গঠনের সময় স্বজনপ্রীতি-আত্মীয়তা বর্জনের নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, দলের মধ্যে যদি কোনো অনুপ্রবেশকারী ঢুকে থাকে, তাহলে তাদের ছেঁকে ছেঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের কমিটিতে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি-আত্মীয়তা চলবে না। কমিটিতে শালা-সম্বন্ধী, মামা-ভাগনে, ভাগনি-শালী—এগুলো চলবে না। এ বক্তব্যের ঘণ্টা খানেক পরই দ্বিতীয় অধিবেশনে জাহাঙ্গীর কবির নানক কাউকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি সভাপতি পদে মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী ও সাধারণ সম্পাদক পদে দীপক কুমার রায়ের নাম ঘোষণা করেন।
এরপর কার্যকরী সদস্য পদে রমেশ চন্দ্র সেন, দবিরুল ইসলাম ও ইমদাদুল হকের নাম এবং সহ-সভাপতি পদে মাহবুবুর রহমান খোকন, মাহবুবুর রহমান বাবলু, শেখর কুমার রায়, সেলিনা জাহান, তোজাম্মেল হক, প্রবীর কুমার রায়, আখতারুল ইসলাম, এস এম মঈন ও ফজলুল হক জনের নাম ঘোষণা করেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসম গোলাম ফারুক, মোস্তাক আলম ও মো. মনিরুজ্জামান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন জুলফিকার আলী, মাজহারুল ইসলাম, সন্তোষ আগরওয়ালা। মহিলা সম্পাদক পদে আয়শা সিদ্দিকা, প্রচার মোস্তাফিজুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক পদে মো. নাসিরুল ইসলাম ও অর্থ-বিষয়ক পদে বেলাল হোসেনের নাম ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে সব সময় দলের কমিটি গঠনের সময় স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয়তা বর্জনের কথা বলে এলেও আমরা মানছি না। কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত বক্তব্যে ভালো ভালো কথা বললেও কাজের সময় সেটা ভুলে যান। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার সময়ও এমনটি হয়েছে।’আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা সম্মেলন সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁরা অনেকেই নিকটাত্মীয় হলেও সবাই দলে সক্রিয়। একটি পক্ষ দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসব অভিযোগ করে যাচ্ছে।
এবার সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু জাফর শামসুদ্দিন। কিন্তু দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রার্থীর প্রস্তাব না চেয়ে সরাসরি কমিটি ঘোষণা করায় তিনি আর প্রার্থী হতে পারেন নি। এ বিষয়ে আবু জাফর বলেন, এটা কোনো সম্মেলনই হয়নি। সম্মেলনের নামে প্রহসন হয়েছে। কাউকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটা রমেশ চন্দ্র সেনের মনগড়া কমিটি হয়েছে। তিনি (রমেশ চন্দ্র সেন) টাকার বিনিময়ে রাজাকারের পরিবার ও ফ্রিডম পার্টির নেতাদের কমিটিতে জায়গা করে দিয়েছেন। আবু জাফর আরও অভিযোগ করেন, ভাই-ভাই, বাবা-ছেলে একই কমিটিতে আসতে পারবেন না—এটা গঠনতন্ত্রে নেই। এটা নেতাদের মনগড়া। মনগড়া হলেও সবার ক্ষেত্রে সমান হতে হবে।
বালিয়াডাঙ্গীতে দুই ভাই কমিটিতে এসেছেন বলে সেটা বাতিল করা হবে। আর জেলা কমিটিতে ভাই-ভাই, স্বামী-স্ত্রীসহ নানা সম্পর্কের লোক বসাবেন—এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা অনৈতিক। সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ।
এছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমূখ। সভাপতিত্ব করেন সদ্য সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ দবিরুল ইসলাম এমপি।