নিউজ ডেক্সঃ বর্ষা মৌসুমে ধরে রাখা বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে মাছ ধরা উৎসব। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ শনিবার রাতে সদর উপজেলার বুড়ি বাঁধের ৬টি সুইচ গেট খুলে দিলে উজানের পানি নামতে শুরু করলে ভোর থেকে শুরু হয় মাছ ধরা উৎসব। আর মাছ ধরা উৎসবকে ঘিরে পরিনত হয় মিলন মেলায়।
উৎসব মুখোর পরিবেশে প্রতিবারের মতো এবারো ঠাকুরগাঁও শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ খইয়া জাল, পলো ও মাছ রাখার পাত্র (খলই) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বুড়ি বাঁধের আশপাশের আকচা, আখানগড়, চিলারংসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল নামে মাছ শিকারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষে তথ্য জানায়, আকচা, আখানগড়, চিলারং তিনটি ইউনিয়নের আশপাশে উচু জমির চাষ ব্যবস্থার সুবিধার্থে ১৯৫১ সালে শুরু হয় এই বাধ নির্মানের কাজের শেষ হয় ১৯৫৭ সালে। নির্মামের দীর্ঘ দিন পর ১৯৭৮ সাল থেকে সেচ ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য সদর উপজেলার এ তিনটি ইউনিয়নের সীমানায় শুক নদীতে বুড়ির বাঁধ নামের একটি জলকপাট নির্মাণ হয়। সেখানে বর্ষা মৌমুমে পানি ধরে রেখে এ এলাকার ২ হাজার হেক্টর জমির কৃষকের সেচ সুবিধা দিয়ে আসছে। আর এ বাঁধের উজানে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ধরে রাখায় হয় পানি। সেখানেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয় অভয়াশ্রম। জেলার মানুষের মৎস্য চাহিদা পুরনে ছাড়া হয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সেচের প্রয়োজন শেষ হলেই ৩-৪ মাস পানি ধরে রাখার পর খুলে দেয়া হয় বাধের গেইট। সেই সাথে উম্মুক্ত করে দেয়া হয় মাছ ধরতে।
আকচা ইউনিয়ন থেকে আসা মংলু বর্মন, আটোয়ারী থেকে আসা রফিকুল ইসলাম ও স্থানীয় এলাকাবাসি হজরত আলী জানান, আমরা এই দিনটির জন্য আগ্রহে থাকি। মাছ পাওয়া যাক আর না যাক সেটা বড় কথা নয়। এখানে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সকলে আসেন মাছ ধরতে। আবার কেউ আসে ক্রয় করতে। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পরিনত হয় মিলন মেলায়।
জেলা শহরের কালিবাড়ি বাজারের মাছের পাইকার, গোবিন্দ, আজিজুল ইসলাম, সচিন চন্দ্রসহ অনেকে জানান, আজ দেশীয় জাতের মাছ পাওয়া কঠিন। তাই ক্রেতারা মাছ কিনতে আসে বাধের পারে। আমরাও পাইকারি দরে মাছ ক্রয় করছি যারা মাছ ধরছে তাদের কাছ থেকে। এখানে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ কেনা বেচা হয়েছে। যদি পানি নামতে দেরি হয় তাহলে আগামীকালও মাছ কেনা বেচা হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ জানান, মাছ ধরা উৎসবে শুধু ইউনিয়নের লোকেরই নয়। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছে এখানে। কেউ মাছ ধরতে আসে কেউবা আসে মাছ কিনতে। এতো লোকের সমাগম যা দেখেই বোঝা যায় উৎবের আমেজ।