নিউজ ডেক্সঃ ঠাকুরগাঁওয়ে দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পরে দরিদ্র পরিবারগুলো। চেক জালিয়াতির মামলায় নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। জেলা সদরের রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিবিষ্ণুপুর গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী আবু তাহেরের কাছে সাদা চেক ও স্ট্যাম্পে সহি দিয়ে একই গ্রামের সমির উদ্দীনের ছেলে দবিরুল ইসলাম ব্যবসা পরিচালনায় সুদে দুই লাখ টাকা গ্রহন করেন। যার চুক্তি ছিল দুই বছরের মধ্যে সুদসহ তিন লাখ টাকা পরিশোধের। কিন্তু মাত্র সাত মাসের মধ্যে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি টাকা হাতিয়ে নিতে কৌশলে মামলা দেয়ায় হয়রানী শিকার হচ্ছে দবিরুল।
ভুক্তভোগী দবিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালে করোনার সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু তাহেরের কাছে সুদের উপর দুই লাখ টাকা ধার নেই। ছয় মাস পর পিতার হাত দিয়ে এক লাখ টাকা, এক মাস পর স্থানীয় এক ব্যাক্তির মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।
পরে বাকি ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে গেলে আবু তাহের আরো দেড় লাখ টাকা চেয়ে বসেন। না হলে সে আদালতে মামলা করবে বলে হুমকি দেন। পরবর্তিতে আবু তাহের তাকে জানান যে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে সুদের। আসল দুই লাখ টাকা দ্রুত না দিলে আদালতে পাঁচ লাখ টাকার মামলা করবেন। পরে উপায় না পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বসতে চাইলে তা কর্নপাত না করে কালক্ষেপন করে ইউনুস নামে একব্যক্তিকে দিয়ে ৫ই জুলাই ২০২২ ইং তারিখে আদালতে আমার বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলা করেন।
টাকা নিয়েছি আবু তাহেরের কাছে আবার দেড় লাখ টাকা পরিশোধও করেছি। কিন্তু ইউনুস আমার নামে পাঁচ লাখ টাকার মামলা করলো কেন? আমি তো ইউনুসকে চিনিনা। আমি প্রায় নিঃস্ব। তারপরেও ওই মামলায় আমাকে গ্রেফতারও করা হয়। পরে একদিন কারাগারাবাস শেষে জামিনে মুক্তি পাই। আবু তাহের কৌশল খাটিয়ে অন্যের মাধ্যমে মামলা করেছেন। যা সম্পুর্ন অন্যায় তার খপ্পরে পরে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। যা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমি এর সুষ্টু বিচার দাবি করছি আদালতের কাছে।
ভুক্তভোগীর বাবা হাজী সমির উদ্দীন বলেন, আমার ছেলে দবিরুল ব্যবসা ও অন্যান্য কাজের জন্য আবু তাহের কাছে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প জমা দিয়ে দুই লাখ টাকা নেয়। অল্প কিছু টাকা বাকি থাকলেও সেটাও আমরা দিতে চাইছি। কিন্তু টাকাটা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে না পারায় আবু তাহের ইউনুসকে দিয়ে আদালতে মামলা করিয়েছে। আবু তাহের কৌশল খাটিয়ে দাদন ব্যবসার জালে মানুষকে হয়রানী করছে। যা প্রশাসনের নজরে আনা প্রয়োজন। তারও শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে মানুষ এর জালে বন্দি হতেই থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, আবু তাহের ও ইউনুস আলী দুজনেই সুদের ব্যবসা করে। সময় মতো টাকা দিতে একটু দেরি হলেই গরীব মানুষের উপর অত্যাচার করে। আবু তাহের নিজে বাদি না হয়ে অন্য মানুষকে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা করে। এটাই তার কৌশল। আমরা চাই তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।
অপর দিকে ইউনুস আলী মামলার এজাহারে নিজেকে ধান-চাল ব্যবসায়ী দাবি করলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি কোন ব্যবসার সাথে জড়িত নন। তিনি একজন শ্রমিক। টাকার লোভে মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানী করাই তার পেশা বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে আবু তাহের জানান, অনেকের কাছে আমি টাকা পাই। তবে দবিরুল ইসলামের সাথে আমার কোন লেনদেন হয়নি। অন্যদিকে মামলার বাদি ইউনুস আলী এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হয়নি।
সংশ্লিস্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহাগ বলেন, দবিরুল টাকা নিয়েছে আবু তাহেরের কাছে ইউনুসের কাছ থেকে নয়। সুদের টাকা সময় মত পরিশোধ না করায় তাকে দিয়ে মামলা করান। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেস্টা করা হবে।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, সুদের টাকা দিতে না পারায় আদালতে মামলা হয়েছে এটা আমার অজানা। তবে ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।