নিউজ ডেক্সঃ যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৪ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ে আনা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়। গতকাল রোববার (৩ নভেম্বর) তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জানা গেছে, দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, জি কে শামীমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মামলা করা হয়েছে যার তদন্ত চলছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শামীমের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। তথ্য আছে, এ টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। দেশে-বিদেশে তার সম্পদ রয়েছে। এ কারণেই বিশেষ তদন্ত সাপেক্ষে তাকে ডাকা হয়েছে। আশা করছি, আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুদকের করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। তিনি যে পর্যায়েই থাকুন অনুসন্ধান হবে। ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বিষয়ে দুদক কমিশনার বলেন, কিছু এমপি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন, কেউ কেউ দেননি। সবার সম্পদের হিসাব পেলে দুদক অনুসন্ধানে যাবে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর জি কে শামীমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা মামলা করে দুদক। মামলার পরপরই অন্য মামলায় কারাগারে থাকা শামীমকে নিজেদের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তা মঞ্জুর করে রিমান্ড দেয়।
যুবলীগ নেতা জি কে শামীম নিজের পরিচয় দিতেন যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিতেন। সব সময় চলতেন ছয় জন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় কাজের প্রায় সবই ছিল তার প্রতিষ্ঠানের কবজায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই দিন তার কার্যালয় থেকে নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, নয় হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারের পর শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইন এবং মাদক আইনে মামলা করা হয়। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ও র্যাব।
২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
সূত্র জানিয়েছে, শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড বর্তমানে এককভাবে গণপূর্তের ১৩টি প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। আবার যৌথভাবে আরও ৪২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, যা সারা দেশে চলমান অধিদপ্তরের মোট প্রকল্পের ২৮ শতাংশ। সব কটি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৩০১ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।