করোনাজনীত কারণে দেশের সাথে ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালে এবং প্রাইভেট চেম্বারে করোনা ছাড়াও অন্যান্য অসুখের চিকিৎসার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারন ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশংকার কারণে চিকিৎসায় অংশ না নেওয়া। যে সব ডক্তার নিরাপত্তা পোষাক পেয়েছেন তারা ঝুঁকি নিয়েই বরাবরের মতো জাতির দুর্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২/১টি নেগেটিভ ঘটনা বেশী প্রচার পেলেও ডাক্তাররাই শেষ ভরসাস্থল। আমরা যারা অন্য রোগের রোগী তারাতো ডাক্তারের কাছেই যাবো। ডাক্তার পরামর্শনা দিলে কে পরামর্শ দিবে।
এ বিষয়ে করোনা ছাড়া অন্য রোগীদের জন্য একটা কাজ করা যায় কিনা বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
সকল ডাক্তার হাসপাতালের সময় হাসপাতালের নিজস্ব চেম্বারে থাকবেন। তারা সরাসরি রোগীর কনটাক্টে আসবেননা। হাসপাতালে সব ডাক্তারের জন্য ২ ইউনিটের ইন্টারকম সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। যাতে করে রোগীরা বাইরে থেকে বা অন্য রুম থেকে কথা বলতে পারেন। আর টিকিট নিয়ে যাতায়ত করবে একজন এটেনডেন্ট। অথবা ডাক্তারের পরামর্শমতো হাসপাতালে প্রশিক্ষণরত নার্সরা ঔষধের নাম লিখে দিবে , এবং অবশ্যই সোসাল ডিসটেন্স কার্যকরী করে রোগীদের সেবা দেওয়া হবে।
আর প্রাইভেট চেম্বারের ব্যপারে যা করা যেতে পারে তা হলো একটা মোবাইল নম্বরে একজন এটেনডেন্ট সিরিয়াল করবেন। ডাক্তার সাহেব চেম্বারে থাকবেন। এখানেও ২ ইউনিট ইন্টার কম সিস্টেম থাকতে পারে অথবা ডাক্তার সাহেবের মোবাইল নম্বরে কথা বলে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। সিরিয়াল পেলেই। ডাক্তারের পরামর্শ ফি এটেনডেন্ট এর বিকাশ নম্বরে পাঠানো হবে ডাক্তার সাহেব যদি কোন টেষ্ট দেন সেটাও টেষ্ট করে রিপোর্টটা ডাক্তার সাহেবের মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে দেওয়া যেতে পারে। ডাক্তার সাহেবও প্রেসক্রিপশনটা রোগীর ম্যাসেঞ্জারে দিয়ে দিবেন। ডাক্তার সাহেবের মোবাইলে ওয়াইফাই / ইন্টারনেট সংয়োগ থাকবে। কন্টাক্টে না এসেও ভিডিও কলে রোগীরা ডাক্তার সাহেবের সাথে কথা বলবেন। এই ব্যবস্থা চালু করলে বাড়ীতে বসেই একজন রোগী পরামর্শ নিতে পারবেন। এতে অন্তত জরুরী কিছু চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া যাবে। রোগীরাও সেবা পাবে। আমাদের ক্লিনিকগুলোতে যে সব স্বাস্থ্য কর্মী কাজ করেন তাদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মালিককে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে একটা কার্যকর ব্যবস্থা দাঁড় করানো যেতে পারে। আমি মনে করি ডিজিটাল ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে আমরা চালু করতে পারি। টেকনোলজি আছে কাজে লাগাই। সবাই উপকার পাবো। স্থানীয় প্রশাসনই মুলত জেলা প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন , বিএমএ বসে আলোচনা করেই বিষয়টি চালু করতে করতে পারে।
২য় প্রসঙ্গ
বর্তমান সময়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বাড়ীতে থাকতে হচ্ছে । যারা যেভাবেই ভাবুকনা কেন এখন বাড়ীতে থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। দেশে ব্যাংকের টাকার চোর ,অসৎ ব্যবসায়ী যেমন আছে তেমনি দিন আনা দিন খাওয়া, শ্রম বিক্রি করে খাওয়া মানুষ আছে। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনি যে ভাবে তৈরি করা আছে তাতে ২/৩ দিন খাবার থাকার কথা। ফেসবুকের কল্যাণে কোথায় কে একটা পারুটি বিতরণ করছে তাও জানা যাচ্ছে। জাতির এই দুর্দিনে প্রচুর হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে এসেছে নিরন্ন মানুষকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য। বিষয়টিকে আমি খুবই মানবিক হিসাবে দেখি। আরো মানুষ এগিয়ে আসবে।
সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। ফেসবুকের ছবিতে জেলা প্রশাসক যেখানে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন সেখানে সোসাল ডিসটেন্স মেনেই দেওয়া হচ্ছে। আবার আমরা গর্ব করতে পারি ডিসি সাহেব বা একজন পুলিশ কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক ব্যক্তি , স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা ব্যক্তি ঘাড়ে করে খাবার বহন করে বাড়ী বাড়ী খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
আমার মতে এভাবে খাদ্য সামগ্রী সহায়তা দিলে কয়েকটি সমস্যার সৃষ্টি হবে যা আখেরে অপুরনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ক) শহর এবং শহরতলীতে কিছু মানুষ পাওয়া যাবে যারা ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে সব সময় খাদ্য সংগ্রহের জন্য শহরেই থাকবে । এদেরকে কোন ভাবেই বাড়ীতে রাখা যাবেনা। এদের কাজই হবে খাদ্য সংগ্রহ করা। যেমন শীিতের সময় কম্বল যোগাড় করে। ফলে প্রচুর মানুষ এক জায়গায় জড়ো হবে।
খ) যারা খাদ্য সহায়তা দিবেন তারা যথা সম্ভব শহর এলাকা বা শহর তলীতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করবেন। ফলে একই এলাকার মানুষ একাধিক বার খাদ্য সহায়তা পাবে।
গ) খাদ্য বিতরণের জায়গায় প্রচন্ড ভীড় হবে। সোসাল ডিসটেন্স কোন ভাবেই মানানো যাবেনা। রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ বিতরণ করলে তা কথাই নাই। মনে হবে মিছিল আসছে। তিনি কাউকে নিষেধ করতে পারবেননা। বরং লোক জড়ো হওয়া তিনি পছন্দই করবেন।
ঘ) কিছু পরিবার আছে যারা না খেয়ে থাকবে কিন্তু কাউকে বলতে পারবেনা , লাইনে দাঁড়াতে পারবেনা, সাহায্য সংগ্রহের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে পারবেনা। এরা থাকবে বেশি সমস্যায়।
ঙ) জেলা প্রশাসক সাহেবের পক্ষে সারা জেলায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবেনা।
এই সব সমস্যা সমাধানে যা করা দরকার তা হলোঃ
ক) প্রতিটি ইউনিয়নে ডাটাবেজ করে নির্ভূল তালিকা প্রনয়ন করা দরকার , কার কি পরিমান সহায়তা প্রয়োজন। এই কাজটা খুব কঠিন নয় কেননা করোনা ইমার্জেন্সিতে সহায়তা বা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করার প্রয়োজনে সকল সরকারি কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে থাকার সরকারি নির্দেশনা আছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন আর পুলিশ প্রশাসন ছাড়া আর কাউকে তো কোন কর্মসুচিতে বা রিলিফ ওয়ার্কে দেখা যাচ্ছেনা। খবর পাওয়া যাচ্ছে তারা তো বাড়ী চলে গেছে। তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকবেন জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করবেন। এইসব কর্মকর্তাকে এক এক টি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার করে ইউপি চেয়ারম্যান , সদস্য সমন্বয়ে সরজমিনে তালিকা প্রনয়ন করা যেতে পারে।
খ) জেলা প্রশাসন বা জেলা করোনা নিয়ন্ত্রন কমিটি খাদ্য সহায়তার একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করবেন। অর্থাৎ একটি প্যাকেটে কত পরিমান কি খাদ্য থাকবে।
গ) যে সব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সহায়তা করতে চাইবেন তারা প্যাকেট করে জেলা প্রশাসনের গোডাউনে পৌছে দিবেন অথবা খবর দিলে জেলা প্রশাসন সংগ্রহ করবে। এতে সকল প্যাকেটের সামগ্রী একই রকমের হবে। কেউ যদি ১ প্যাকেটও দিতে পারে সেটাও কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহন করতে হবে। এর পর জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে প্রাপকের বাড়ীতে খাবার পৌছে যাবে। তালিকাভুক্ত সকলে খাদ্য সামগ্রী পাবেন ফলে কোথাও কোন ভীড় হবেনা। ফলে লোকজনকে বাড়ীতে রাখা সহজ হবে। ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ একাজে সহায়তা করবেন। তার চেয়েও ভালো হয় যিনি বা যে সংগঠন সহায়তা করতে চাইবেন তিনি বা তারা তাদের সহায়তার অর্থ জেলা প্রশাসক সাহেবের কাজে জমা দিলে জেলা প্রশাসক মহোদয় খাদ্যেও প্যাকেট তৈরি করে বিতরণ করবেন।
এতে করে সুসম বন্টন করা যাবে। সরকারকে জানানো যাবে কত পরিমান সহায়তা প্রয়োজন। থোক বরাদ্দ দিয়ে সমস্যা বেশী হবে। চুরি বাটপারি হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই সব অপকর্মের খবর পাওযা যাচ্ছে , এটা আরো বাড়বে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে খুবই কঠোর ভাষায় এদের বিরুদ্ধে হুসিয়ারী উচ্চারন করেছেন তার পরেও যেসব শয়তানরুপি মানুষ খাদ্য চুরি করছেন , তাদের সামারী ট্রায়াল করে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আর বছর দুয়েকের সশ্রম কারাদন্ড। মানুষকে বাড়ীতে রাখা দরকার কঠোরভাবে তা তখনই সম্ভব হবে বাসায় খাবার পৌছে দিতে পারলে।