• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

এসএসসি’র ২০ লাখ উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীর ৬ দাবি

সাংবাদিকের নাম / ৩৮ জন দেখেছেন
আপডেট : মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০

নিউজ ডেস্কঃ করোনা মহামারির কারণে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আগামী বছর (২০২১ সাল) এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে জানিয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে পরীক্ষা কীভাবে হবে, সিলেবাস কমবে কিনা, সময় বাড়ানো হবে কিনা এসব বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি) এখনও ‘পরিকল্পনা’ তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এক ধরনের উদ্বেগে রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এসব শিক্ষার্থী বছরের প্রায় পুরোটাই ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ৯ মাস ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে থাকার পর মাত্র ৩ মাসে পরীক্ষার প্রস্তুতির ঘোষণায় ব্যাপকভাবে মানসিক চাপে ২০ লাখ কিশোর-কিশোরী।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম সময় নিউজকে বলেন, ‘এখানে দুই ধরনের ইস্যু আছে। একদিকে পরীক্ষা সময় মতো না হলে সেশনজট হবে। অন্যদিকে অল্প সময় দিয়ে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ওপর বিরাট বোঝা বা মানসিক চাপ দেয়া হবে। মানসিক চাপে পড়লে এর কিছু ফলাফল হতে পারে। যেমন, পারফর্মেন্স খারাপ হতে পারে, মোটিভেশন কমে যাবে, ড্রপআউট হতে পারে। অনেকে ভয়ে এবার পরীক্ষা নাও দিতে পারে। এসব মানসিক চাপের ফলে অনেকে ড্রাগ নেয়াও শুরু করে। এজন্য সব বিষয় ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া।’
ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরাও চায় ক্ষতি পুশিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘এসএসসি ব্যাচ ২০২১’, ‘এসএসসি’২১ ব্যাচ এর ক্ষতিপূরণ চাই’, ‘করোনার মধ্যে এসএসসি নয়’সহ বেশ কিছু নামে গ্রুপ খুলেছে তারা। এসব গ্রুপে প্রায় ৭ লাখ সদস্য রয়েছে।
গ্রুপগুলোর এডমিন ও সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে সময় নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, তারা পরীক্ষা দিতে চান। কিন্তু তিন মাসের প্রস্তুতিতে কোনোভাবেই পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব না। এজন্য তারা ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, পরীক্ষা নিতে হলে সিলেবাস শেষ করার মতো যৌক্তিক সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, অল্প সময়ে পরীক্ষা নিলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে অন্তত তিন মাস আগে ঘোষণা করা, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলে সব রকম ফি নেয়া বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দেওয়া।
বীরগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স ম র আল নাহিয়ান হৃদম বলেন, ‘একজন মানুষ কীভাবে ৮ মাসের সিলেবাস ২ মাসে শেষ করবে? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সবার পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি,এইচএসসি’২০ ব্যাচ যেখানে ৭ মাস সময় বেশি পেয়েও অটোপাস পেল সেখানে আমরা ৮ সময় কম পেয়েও কীভাবে পরীক্ষা দেই।’
এসব দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে পাংশা পাইলট গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষার্থী পুস্পিতা দিশা বলে,‘আমাদের এমন সময় দেওয়া দরকার যেন পরীক্ষা নিয়ে হিমশিম খেতে না হয়। আবার আমাদের যেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা না হয়।’
শাহীন স্কুলের মাওনা শাখার শিক্ষার্থী নুর হাসনাত প্রান্ত বলে, ‘করোনার কারণে আমাদের ৮ মাস ক্ষতি হয়েছে। যদি পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে আমাদের সিলেবাস কমাতে হবে, সময় বাড়াতে হবে এবং সহজ করে পরীক্ষা নিতে হবে।’
ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ ঈবনে মোফাজ্জল বলে, ‘করোনার মধ্যে আমরা আমাদের লেখাপড়া স্বাভাবিকভাবে করতে পারিনি। এজন্য পরীক্ষা পেছানো হোক।’
নারায়ণগঞ্জের গোলাকান্দাইল মুজিবর রহমান ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ তাসনিম বলে, ‘আমাদের এসএসসি পরীক্ষা যদি ৮ মাস পেছানো হয় তাহলে সেশন জটের সৃষ্টি হবে। এতে আমাদের জীবন থেকে এক বছর নষ্ট হবে। তাই আমাদেরকে অটোপাস দেওয়া হোক।’
বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী উৎস বকসী বলে, ‘আমরা কোনোভাবেই করোনা চলাকালীন এবং করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে এবং স্কুলে যেতে রাজি নই। আমাদের ৮ মাসের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিবো।
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র প্রহর আশফাক বলে, ‘৮ মাসের পড়া ২ মাসে শেষ করা অসম্ভব। আর সামনে আসছে করোনার ২য় ঢেউ। ফলে আমাদের জীবন হুমকিতে রয়েছে। মানবিক বিবেচনায় ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরও অটোপাস দেওয়া হোক।’
ফরিদপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী পাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কিছুদিন আগে অস্পষ্টভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং এসএসসি ২০২১ সময়মতো নেওয়ার কথা বলেছেন। ফলে অনেক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাইরে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই শিগগিরই এসএসসি ২০২১ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিৎ।’
শিক্ষার্থীদের এমন উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহানারা বেগম সময় নিউজকে বলেন, ‘এসএসসি’র এখনও ফর্ম ফিলাপ হয়নি। এর পরে টেস্ট পরীক্ষাসহ বেশ কিছু প্রক্রিয়া আছে। মাস খানেক আগে রুটিন দিতে হয়। সময় অল্প। আমি মনে করি, সরকার শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের বিষয়টিও মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখন নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি বুঝে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
অল্প সময় দিয়ে পরীক্ষা ঘোষণা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক সময় নিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা সব সময় একটু চাপের বিষয়। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রাখা হবে। তারা নবম ও দশম শ্রেণিতে কতটা ক্লাস করতে পেরেছে, সংসদ টিভি বা অনলাইনে কতদূর এগিয়েছে এসব বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।’
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকল বিষয় বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে সময় নিউজের পক্ষ থেকে একটি অনলাইন জরিপ করা হয়। গত ৭ নভেম্বর থেকে ৯ নভেম্বর এ জরিপে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী মতামত দেন। জরিপে প্রশ্ন ছিল, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে এসএসসি’২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সামাজিকমাধ্যমে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে পরীক্ষা পেছানো, সিলেবাস কমানো ও অটোপাস দেওয়া; এ তিনটি দাবি থেকে আপনি কোন দাবিটি সমর্থন করেন?’
উত্তরে অটোপাস ঘোষণার পক্ষে মতামত দেয় ৪৪ হাজার ২২১ জন (৮৭ দশমিক ১২ শতাংশ), সিলেবাস কমানোর পক্ষে ৩ হাজার ১৫৭ জন (৬ দশমিক ২২ শতাংশ) ও পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে ৩ হাজার ৩৩৬ জন (৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ)।


এধরনের আরও সংবাদ

Editor: Ataur Rahman
News editor : Joherul Islam
email: newsnat24@gmail.com
Phone: 01717253362, 01744367842
N.C Road, Thakurgaon.