পাসপোর্ট অফিসে গেলাম একটা জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য। জিজ্ঞেস করলাম কত দিন লাগবে। বলল সাধারনত ১২ দিনে পাওয়ার কথা। তবে এখন বই সংকট। ১ মাসও লাগতে পারে। মন খারাপ করে বাইরে চলে এলাম। অমনি এক দরবেশ বাবা ডাক দিলো। হে বৎস, মন খারাপ করে কোথায় যাচ্ছিস? তোর কি লাগবে আমাকে বল। বললাম, বাবা আমার জরুরি পাসপোর্ট দরকার। কিন্তু ওনারা বলছে ১ মাসও লাগতে পারে।
হোক মাওলা, দেখি তোর কাগজপত্র গুলো। তারপর দরবেশ বাবা আমার কাগজ গুলো নিয়ে ফচাৎ করে ছিড়ে ফেললেন। তারপর নতুন ফরম দিয়ে বললেন এটা পুরন কর। বললাম, বাবা আমিতো অরিজিন্যাল কুমিল্লার রসমালাইর মতো খাটি ফার্স্ট ক্লাশ গেজেটেড কর্মকর্তা দিয়ে সত্যায়িত করে এনেছিলাম। এখন আবার গ্যাজেটেড কর্মকর্তা পাব কোথায়?
বাবা
বললেন, আমার চেয়ে বড় কর্মকর্তা আর কে আছেরে এই জগতে। তুই পূরণ কর।
সত্যায়িত আমি করব। ফরম পূরণ করে বাবার হাতে দিলাম। বাবা বললেন হাদিয়া
দিয়ে ছবি তুলে তুই যাগা। ঠিক ৪ দিন পর তোকে স্বপ্নে কল দেব। এসে বই নিয়ে
যাবি।
বলেন কি বাবা, মাত্র ৪ দিন! এ কি করে সম্ভব! সত্যি করে বলেন বাবা, আপনি
মানুষ নাকি জিবন্ত অলি? পাসপোর্ট অফিসের লোকজন বলে ১ মাস লাগবে। আর সরকারি
নিয়মে ১২ দিনের নিচে কোন ভাবেই বই পাওয়া যায় না, কিন্তু আপনি ৪ দিনে
কিভাবে দেবেন?
এসব তুই বুঝবি নারে, সব উপরওয়ালার লীলা খেলা। তারাতারি টাকাটা দে, উপর ওয়ালাকে দিয়ে আসি।
৬.৫
হাজার সরকারি ফি। আর বাবার হাদিয়া ৮ হাজার। মোট ১৪.৫ হাজার টাকা দিলাম।
বাবা কাগজগুলো নিয়ে উপরওয়ালার কাছে চলে গেলেন। এই টাকার ভাগ বাবা একা
নেবেন না। ভাগ পাবেন বাবা, তার বাবা, তার বাবা পর্যন্ত। বাবাকে জিজ্ঞেস
করেছিলাম, পুলিশ বাড়িতে যাবে না ভেরীফিকেশন করতে?
বাবা বললেন তুইতো ভেরী বোকা লোকরে। পুলিশের দুই চোখে দুইটা কচকচে নোট নিয়ে
চাপ দিয়ে একটা ফু দেব, অমনি তোর বাড়ি ঘর সব স্বপ্নে ভেরীফিকেশন করে
ফেলবে। সব উপর ওয়ালার লীলা খেলারে। হোক মাওলা।
ঠিক চার ওয়ার্কিং ডে
এর পর আজকে বাবা কল দিলেন। আয় বৎস পাসপোর্ট নিয়ে যা। আজকে ১৫মে, অথচ
ডেলিভারী স্লিপে লিখা ডেলিভারী ডেট ১৯ মে ২০১৯।
সত্যি দরবেশ বাবার হেকমত বড় কড়া। আমি বাবার চরন দুটিতে লুটিয়ে পড়লাম। বাবা আপনিই সেরা। আপনার পদধুলি দেন।
হাসপাতাল, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস,ভূমি অফিস সহ সরকারী সব প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে এমন অনেক দরবেশ বাবা দলে দলে বসে জিকির আসগারে মত্ত আছেন। উপর ওয়ালার সাথে উনাদের ডাইরেক্ট কানেকশন।