নিউজ ডেস্ক: টানা পঞ্চম দিনের মতো সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরাক। শনিবারও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বাগদাদ, নাজাফসহ দেশটির বেশ কয়েকটি বড় শহর। এদিনও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান ৫ জন।
এনিয়ে সহিংস এই বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৯-তে দাঁড়ালো। এরমধ্যেই আলোচনায় বসতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরাকি পার্লামেন্টে স্পিকার। এদিকে সহিংসতা বন্ধে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আগের দিনের ধারাবাহিকতায় শনিবারও দুর্নীতি, বেকারত্ব, দুর্বল সরকার ব্যবস্থাসহ নানা কারণে রাস্তায় নামেন সাধারণ ইরাকিরা। তারা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি, অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবী জানান। কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদির।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই এই আন্দোলন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলবে।
অপর একজন বলেন, আমি স্নাতকোত্তর শেষ করেছি। কিন্তু সরকার আমাকে ঝাড়ুদারের একটি চাকরিও দেয়নি। এ দেশের অধিকাংশ যুবকেরই একই অবস্থা।
আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তাদের উপর চড়াও হয় নিরাপত্তা বাহিনী। কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। প্রতিবাদকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে হতাহত হয় বেশ কয়েকজন। এসময় পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, ইরাক এখন এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে, যিনি কি-না বিনা কারণে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যেই ইরাকি পার্লামেন্টের স্পিকার, আলোচনায় বসতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরাকি পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ আল হালবৌসি বলেন, আসলেই, সাধারণ মানুষদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে আমরা ব্যর্থ হয়েছে। এবং এটা উপলব্ধি করতেও আমারও অনেক দেরি করে ফেলেছি। দুর্নীতি আমাদের সমাজের একটি ব্যধিতে পরিণত হয়েছে।
এদিকে ইরাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি এক বিবৃতিতে প্রাণহানি বন্ধ করে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর, দেশটির মানুষ গণতন্ত্রের সুফল পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিলো। কিন্তু সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে সাধারণ ইরাকিরা পেয়েছে দুর্নীতি আর নানা অনিয়মে ডুবে থাকা, ক্ষত-বিক্ষত এক ইরাক। যারই বহি:প্রকাশ গত কয়েকদিনের সহিংস বিক্ষোভ।