নিউজ ডেস্ক: দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে রোববার রাতে ১১ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের কাছে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে প্রবল পরাক্রমশালী ভারতকে। ঘরের মাঠে তারা এভাবে ভাঙাচোরা একটি দলের কাছে হেরে যাবে, তা যেন মানতেই পারছেন না ভারতীয়রা।
আগের আটবারের মুখোমুখিতে একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ, আগের ম্যাচগুলোতে ছিল পূর্ণ শক্তিশালী বাংলাদেশ দল। ৩ বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টিতে যে ম্যাচে ১ রানে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে, সে ম্যাচেও দলে ছিলেন মাশরাফি, সাকিব-তামিমরা।
অথচ, দিল্লিতে এই ম্যাচে তো মাশরাফির থাকার প্রশ্নই আসে না। নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই সাকিব। ব্যক্তিগত কারণে নেই তামিম। ইনজুরির কারণে টি-টোয়েন্টির আরেক অপরিহার্য খেলোয়াড় সাইফউদ্দিনও নেই।
পুরো যেন ভাঙা হাট বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই ভাঙা হাট নিয়েই ভারতীয়দের ৭ উইকেটে পর্যদুস্ত করেছে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। ভারতীয়রা যেন এ বিষয়টা কোনোভাবেই মানতে পারছে না। এ কারণে, তাদের মিডিয়াগুলো খুঁজে বের করছে, কেন এই হার।
কারণ, খুঁজতে গিয়ে বের হলো- দু’বার নাকি আউট হয়েছিলেন মুশফিকুর রহীম। সঙ্গে তো তাদের বাজে ফিল্ডিং আর ডিআরএসের ভুলেই নাকি এই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ভারতকে।
মুশফিকুর রহীমের ব্যাটেই বাংলাদেশ হারাল ভারতকে। ৪৩ বলে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। কিন্তু, তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিন-তিনবার জীবন পেয়েছিলেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘মধ্যে রিশাভ পান্তের জন্য দু’বার নিশ্চিত এলবিডব্লিউয়ের ডিআরএস নেয়নি ভারত। ক্রুণাল পান্ডিয়া মুশফিকের ক্যাচ ফেলে দেন একবার। মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যদি একাধিক জীবন পান, তাহলে জেতার কথা কিভাবে আশা করতে পারে ভারত!’
বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে রিভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উইকেটরক্ষক। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে নির্দেশ দিতেন রিভিউ নিতে হবে কি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ধোনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিভিউ নেয়ার ক্ষেত্রে। এ কারণে ডিআরএস-এর নামই হয়ে গিয়েছে ‘ধোনি রিভিউ সিস্টেম’।
কিন্তু ধোনির উত্তরসূরি রিশাভ পান্ত রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত ব্যর্থ। রোববার ম্যাচে সঠিক রিভিউ না নিয়ে পান্ত ভারতীয় দলকে ডোবান বলে মন্তব্য করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দশম ওভারে ইয়ুজবেন্দ্র চাহালের দুটো ডেলিভারি এসে আছড়ে পড়েছিল মুশফিকুরের প্যাডে। দু’বারই চাহাল নিজে জোরালো আবেদন করেন। প্রথমবার চাহাল ও পান্তর সঙ্গে কথা বলার পরে রোহিত রিভিউ নেননি। দ্বিতীয়বার কোনও আলোচনাই হয়নি। ধোনি হলে এই ভুল করতেন না বলেই মনে করছে ভারতীয়রা। রিভিউ নেয়ার জন্য তিনি নিজেই অধিনায়কের উপরে চাপ তৈরি করতেন।
চাহালের দুটো ডেলিভারির ক্ষেত্রে ভারতীয়রা ধরেই নিয়েছিলেন, বল পিচ পড়েছে লেগ স্টাম্পের বাইরে; কিন্তু, রিপ্লেতে দেখা গেছে বল ঠিক লাইনেই ছিল এবং দু’বারই বল স্টাম্পে আঘাত করত। ফলে মুশফিক জীবন ফিরে পান। সে ওভারেই রিভিউ নেন পান্ত। কিন্তু সেটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। সৌম্য সরকারের বিরুদ্ধে আউটের আবেদন করে বসেন পান্ত। তিনি ভেবেছিলেন, সৌম্যর ব্যাটে লেগে বল তাঁর হাতে এসেছে। রোহিতকে রিভিউ নিতে জোর করেন পান্ত।
পরে দেখা যায় বল ব্যাটেই লাগেনি। রিভিউ নষ্ট করে ভারত। প্রথম দুটো রিভিউ না নিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিলেন পান্ত। কিন্তু উল্টো আরও বড় ভুল করে দলকে ডুবিয়ে বসেন তিনি। রিভিউ নষ্ট হওয়ায় মাঠের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
পরে সংবাদ সম্মেলনেও মুশফিকের রিভিউ প্রসঙ্গে ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘রিভিউ না নিয়ে আমরা ভুল করেছি। প্রথম বলটা ব্যাকফুটে খেলেছিল মুশফিক। আমরা ভেবেছিলাম বলটা বেরিয়ে যাচ্ছে। পরের বলটা ফ্রন্টফুটে খেলে; কিন্তু, আমরা ঠিকমতো বিচার করতে পারিনি।’
শুধু রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে গেছেন মুশফিক, এমন নয়। ১৮তম ওভারে জিততে হলে ১৬ বলে ৩৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। ওই সময়ে ক্রুণাল পান্ডিয়া ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকের। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। ব্যাট হাতেও পান্ত হতাশ করেন এদিন। তার সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিকঠাক না হওয়ায় রান আউট হতে হয় শিখর ধাওয়ানকে। নিজেও বড় শট খেলে দলের রান বাড়াতে পারেননি।