নিউজ ডেস্কঃ সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর ঘটনার দুদিন পর প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির দাবি করেছিলেন তৎকালীন পুলিশ প্রধান। গেলো ৮ বছর ধরেই মিলেছে এরকম আশ্বাস বানী। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের কূল কিনারা হয়নি এখনো।
বছরের পর বছর গড়ায়। সাগর রুনী হত্যার আটচল্লিশ ঘণ্টার গেরো আর খোলে না। তিন বছর আগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নেয়ার সংখ্যাটা ছিলো পঁয়তাল্লিশ। এখন সেটা একাত্তর। আর কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ আশ্বাস চলছে। তিন বছর আগে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছিলেন খান মুহাম্মদ রুমেল। যা এখনো প্রাসঙ্গিক।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২। অনেকেরই ঘুম ভাঙ্গে হৃদয় ভাঙ্গা খবর দিয়ে। এদিন রাতে নিজ বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। প্রতিদিন খবরের পেছনে ছুটে বেড়াতেন যে দুজন মানুষ-তারাই হয়ে যান খবরের শিরোনাম।
হত্যাকাণ্ডের পর সাগর রুনির বাসায় দাঁড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই যাতে এই খুনিদের ধরা যায় তা করা হবে’।
ঘটনার দুদিন পর ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সেসময়কার পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার জানিয়েছিলেন সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির কথা।
হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’
হত্যাকাণ্ডের পর মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বাদী হয়ে মামলা করেন শেরে বাংলা নগর থানায়। চারদিন তদন্ত ভার দেয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০১২। হত্যার মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে অগ্রগতির দাবি করেন ডিবির তৎকালীন উপ কমিশনার।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্তে আমার নিষ্ঠা ক্যাপাসিটি আন্তরিকতা সব টুকু নিয়োজিত করে কাজ করেছি। আমরা আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেফতার ও তাদের আপনাদের সামনে হাজির করতে পারবো।’
২০১২ সারের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাগর রুনির খুনিরা ধরা না পড়ায় কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করে আদালত। একই বছরের ১৮ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে মামলা তদন্তে ব্যর্থতা স্বীকার করে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিনই আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাবের হাতে।
র্যাব আদালতের অনুমতি নিয়ে ২৬ এপ্রিল পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সাগর রুনির লাশ তোলে কবর থেকে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বেশকটি আলামত পাঠানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাবে।
র্যাবের মিডিয়া বিভাগের তৎকালীন পরিচালক এম সোহায়েল তখন বলেন, ‘র্যাবের পক্ষ থেকে যে তদন্ত হচ্ছে, তাতে আমরা চাইনা কোন কিছু অসত্য থাকুক।’
ততদিনে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়। সহকর্মী হত্যার কোনো কূল কিনারা না হওয়ায় রাজপথে আন্দোলনে নামেন সংবাদ কর্মীরা। সচিবালয় ঘেরাওসহ পালিত হয় নানা কর্মসূচি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় সাংবাদিক নেতাদের।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১৫ দিনের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার সুরাহা করার আশ্বাস দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
তিনি বলেন, আশা করি যারা এই অপরাধের জন্যে দায়ী তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবো।
পরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন যেকোনো মুহূর্তে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের।
আসাদুজ্জামান খান কামাল তখন বলেন, র্যাব কাজ করছে। আমি এখনো আশাবাদী যে কোন সময় র্যাব উদঘাটন করবে।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত ৭১ বার সময় নিয়েছে র্যাব।