ভারতের সঙ্গে চরম উত্তেজনা চললেও দেশটিতে আগ বাড়িয়ে পাকিস্তান পরমাণু হামলা চালাবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) লাহোরে শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, কাশ্মীর নিয়ে সৃষ্ট সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে, তা পুরো বিশ্বের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের এক মাস হতে চললেও স্বাভাবিক হয়নি উপত্যকার পরিস্থিতি।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এক মাস হতে চললেও কার্যত এখনো অচল পুরো এলাকা। নির্দিষ্ট কিছু রাস্তায় হাতে-গোনা যান চলাচল করতে দেখা গেলেও বেশির ভাগ এলাকায় থমকে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্য সময় শ্রীনগরের ফলের বাজার ব্যবসায়ী আর আড়ৎদারদের হাঁকডাকে মুখর থাকলেও বর্তমান চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও বন্ধ রয়েছে পণ্য সরবরাহ। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির পাশাপাশি লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় ফল চাষিদের।
এলাকাবাসীরা বলেন, আমরা মোবাইল ফোনে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। এখানে কোনো যানবাহন আসতে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ ট্রাক দরকার হলেও আসতে দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০টি। কোনো ব্যবসায়ী আসতে পারছে না। আমরা চরম সঙ্কটের মধ্যে আছি।
সরকারের উচিত আমাদের সব ধরনের সহায়তা করা। সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে চাষিরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
তবে কাশ্মীরিদের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতা বজায় আছে। তবে উপত্যকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা রুখতে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা ছাড়া সন্ত্রাসবাদ দমন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে হাসপাতাল ও জন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছে কাশ্মীর প্রশাসন।
জম্মু-কাশ্মীরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রহিত কানসাল বলেন, এখানকার
হাসপাতালগুলো খোলা রয়েছে। ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি সব হাসপাতালে স্বাভাবিক
কার্যক্রম চালু রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের ৯০ শতাংশ এলাকা এখন স্বাভাবিক। কিছু
কিছু এলাকায় গাড়ি চালকদের ওপর পাথর নিক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে। সেগুলো
বন্ধে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
ভারতীয় সংবিধান থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দুটি অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্তের পর থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। কাশ্মীর নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করলেও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ওপর ভারতীয় আগ্রাসন থামাতে বিশ্ব-সম্প্রদায় যদি কিছু না করে, তাহলে এর পরিণতি পুরো বিশ্বকে ভোগ করতে হবে। কারণ, পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশ সরাসরি সামরিক সংঘাতের খুব কাছে চলে গেছে। আমরা সবাই বিপদের মুখে আছি। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের নীতি পরিবর্তনের কথা বলেছেন। তবে আমরা আগ বাড়িয়ে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে চাই না।
এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক নিবন্ধে, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধের বিষয়ে বিশ্বসম্প্রদায় মনোযোগ না দিলে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেন সাবেক এ ক্রিকেটার।