• শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন

নাগরিক ভাবনাঃ স্বাস্থ্য সেবা , করোনা যোদ্ধা ও সিজারিয়ান অপারেশন -অ্যাডভোকেট আবু মহী উদ্দীন

সাংবাদিকের নাম / ৫৪ জন দেখেছেন
আপডেট : শনিবার, ১৬ মে, ২০২০

রোগীরা ডাক্তারদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মানে ডাক্তার সাহেবরা চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। দেশের হাসপাতাল গুলোতে সব সময় রোগিদের উপচে পড়া ভীড় থাকে। আর এখন রোগী নেই। রোগী নেই মানে রোগমুক্ত হয়ে গেছি আমরা এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। সাধারণ রোগিরা এখন বেশী বিপদে আছে। তারা হাসপাতালে কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আবার পরিযায়ী ডাক্তার সাহেবরা পসরা খুলে বসেন তারা আর চেম্বারে বসছেননা। ফলে আমরা সাধারণ রোগিরা মানে করোনা ব্যতীত রোগিরা বড্ড বেকায়দায় আছি। আমরা যেমন করোনা নিয়ে ভীত , বাধ্য হয়ে বাসায় বসে আছি। নিজের স্বার্থেই বাসায় থাকতে হবে। অনেকে এখনো মানতে চাচ্ছিনা তাদের জন্য সতর্ক বার্তা হলো যখন আপনি বুঝবেন তখন করার কিছু থাকবেনা। ডাক্তার সাহেবরাও মানুষ তাদেরও ভয় থাকবে , তাদেরও পরিবার আছে। তিনিও পরিবার থেকে বাধা পাবেন এটাই স্বাভাবিক। কেননা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমন যদি হয় সব ডাক্তাররা একজোট হয়ে বললো আমাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সারা দেশ অচল হয়ে যাবে। একজন নার্স মারা গেলে আর নার্সদের খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর হবে। কারো করার কিছু থাকবেনা। দেশ ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী শুন্য হয়ে যাবে। বাইরের দেশ থেকে ডাক্তার আমদানী করে ইমার্জেন্সি মিটানো যাবে কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখা যাবেনা। জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করা যাবে। আমাদের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী দিয়েই চিকিৎসা ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে হবে। অথচ বাংলাদেশে সাড়ে ৪ লাখ স্বাস্থ্য কর্র্মী আছে যেটা আশে পাশের দেশে নেই। বিশাল একটা বাহিনী আছে। দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউিনিটি ক্লিনিক নামের প্রতিষ্ঠান আছে। যা আশে পাশের দেশে নেই। করোনা ব্যবস্থাপনায় আমরা সময় পাচ্ছি। কিন্তু ম্যানেজমেন্টটা বুঝিনা। এটাও কোন দোষের কথা নয়, কেননা বিষয়টি নুতন, শুধু তাই-ই নয় এটা নিয়মিত চরিত্র পাল্টাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসক নন , স্বাস্থ্য সচিব চিকিৎসক নন। আমরা প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে পারি। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা চিকিৎসক নয়। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেননা। প্রয়োজনে , ছুতানাতায়ও বিদেশে যান। সে কারনেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর উন্নয়ন হয়না একথা জোর দিয়ে বলা যায়। আমাদের দেশে বিশ্বমানের ডাক্তার আছে। ডাক্তারদের সংগঠন আছে। যেমন বি.এম.এ , ড্যাব , স্বাচিপ ইত্যাদি। তবে তাদের কি কাজ এটা সাধারণ মানুষের জানবার কথা নয়। একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে সরকার প্রধানের কাছে এই দাবীটা কেন তোলা হয়নি , স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব সবাইকে ডাক্তার হতে হবে। এই দাবীটা উঠলে এখানকার কর্মকর্তারা যদি ডাক্তার হতেন তারা তাহলে ডাক্তারদের মর্ম বুঝতে সহজ হতো। এই কাজটা করার সময় এসেছে। এটা করলে জাতি উপকার পাবে। আমরা যতটা বুঝি তা হলো যখন যে দল সরকার পরিচালনায় থাকে তখন সেই দল সংগঠনের নের্তৃত্ব দখল করেন। তাদের পোষ্টিং আর বিরোধীদের খারাপ জায়গায় পোষ্টিং , ছুতানাতা ট্রেনিংয়ের নামে বিদেশ ভ্রমন আর সরকারের তোষামোদ করে সুবিধা দেওয়া। সরকার বদল হলে আবার জার্সি বদল , সব পাল্টে যায়। যারা বিএমএ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে কুলিয়ে উঠতে পারেননা তারা আলাদা সংগঠন করেন। সে কারনে ড্যাব , স্বাচিপ নামে সংগঠন গড়ে উঠেছে, ভবিষ্যতে হয়তো আরো বাহারী নামের সংগঠন গড়ে উঠবে। এখনকার জরুরী বিষয় করোনা ব্যবস্থাপনা । ডাক্তাররা চেম্বারে বসছেননা। বেসরকারি হাসপাতালে রোগিদের চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তালবাহানা করছে। মাঝে মাঝে চিকিৎসা দুর্ভোগের যে সব খবর বেরুচ্ছে সেগুলো মোটেও সুচিকিৎসার বিষয় প্রমান করেনা। অভিযোগের সরলীকরণ করলে মনে হবে তারা চিকিৎসা সেবা দিতে আগ্রহী নন। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয় বহুল চিকিৎসা অহেতুক টেষ্ট করানোতে বাধ্য করা এসব চালু ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক টিভি বার্তায় সতর্ক করেছেন , যে সব বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করবেননা তাদের তালিকা প্রনয়ন করা হচ্ছে। পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ধারনাটা এতোটা খাট যে তিনি বোধহয় বুঝতেই পারেননি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীর চেয়ে কম ক্ষমতাশালী নন। করোনা ইসুতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো যোগ্যতা এবং দক্ষতা তাদের আছে। চিকিৎসা না করলে ডাক্তারের লাইসেন্স বাতিল হবে কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা লেখাপড়া বাতিল কে করবে?। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি নিজে চিকিৎসা করবেন। তিনিতো ডাক্তার নন। স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে চিকিৎসা করাবেন তিনিওতো ডাক্তার না। তাহলে চিকিৎসা কে করবে।
ডাক্তারদেরকে তো গার্মেন্টস শ্রমিক ভাবলে চলবেনা। হাসপাতাল ছুটি দিয়ে দিলাম , স্বাস্থ্য কর্মীরা, কর্মচারীরা বাড়ী গেল আবার বললাম হাসপাতাল খুলে দিলাম, স্বাস্থ্য কর্মীরা চাকুরী হারানোর ভয়ে দুর্দশা মোকাবেলা করে কর্মস্থলে আসলো , আবার বললাম ভুল হয়েছে তোমরা চলে যাও। আবার তারা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরে গেল , চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে তা করার কোন সুযোগ নেই। গোটা দেশের সব কিছু লক ডাউন করলেও চিকিৎসা সেবা চালু রাখতেই হবে। ইতোমধ্যে সর্বনাশ কতটুকু হয়েছে এবিষয়ে ফলাফল জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে করোনা ভাইরাস দুর্যোগে ক্লিনিকগুলি বন্ধ। ফলে সিজারিয়ান অপোরেশনও বন্ধ। দেশে লকডাউন , সাট ডাউন বা যে ডাউনই হোক শিশুর জন্মতো আর বন্ধ নাই। প্রতিদিনই শিশু জন্মগ্রহণ করছে। করোনাপুর্ব কালে দেশে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের ৯০ ভাগেরও বেশি সিজারিয়ান অপোরেশন হতো। ডাক্তারদের মতামত , পরামর্শ বা নির্দেশনা অনুসারেই প্রসুতির সিজার করা হয়। একজন ডাক্তার যখন বলেন বাচ্চার অবস্থা ভাল নয়। এখুনি সিজার করতে হবে। না হলে বাচ্চাকে বাঁচানো যাবেনা। তখন কোন অভিভাবক স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন ? এ পর ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করে বৌ বাচ্চা নিয়ে বাচ্চার বাবারা বাড়ী পৌঁছেন।
পক্ষান্তরে করোনা দুর্যোগ চলাকালীন সব তো লক ডাউন। ডাক্তার নার্সরাও যেহেতু মানূষ , তাদেরওতো ভয়ভীতি আছে। ফলে অধিকাংশ, জায়গাতে করোনা ছাড়া রোগীদেরও চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে। ১৪/৫/২০২০ কালের কন্ঠে খবরে প্রকাশ করোনা দুর্যোগ চলাকালীন ১লক্ষ ৭৫ হাজার শিশু জন্ম গ্রহণ করেছে তার ৯৬ ভাগই নরমাল ডেলিভারী । মাত্র শতকরা ৪ ভাগ সিজারিয়ান অপারেশন। এই হিসাবটি আমাদেরকে একটা নিরেট সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। তা হলো দেশে যে সব সিজারিয়ান অপোরেশন হয় তার অধিকাংশই বানিজ্যিক কারণে হয়। এই বানিজ্যের সাথে যারা জড়িত তারা কৃষক , শ্রমিক , দিন মজুর বা সাধারণ মানুষ , ডি.সি এস.পি , জজ সাহেবরা নয়। এর সঙ্গে ডাক্তার , ক্লিনিক মালিক , কিছু দালাল জড়িত। কোন ডাক্তার যদি আন্তরিক ভাবে বলেন যে সিজার করতে হবেনা। প্রসুতির নিকট জনেরা কতটা সাহসী , ভরসা পাবে সে কথা কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবেনা।
করোনা দুর্যোগ আমাদের আর একটা সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি , তাহলো আমরা ‘গরীবের ডাক্তারের’ খোজ পেয়েিেছ , স্বাস্থ্য কর্মীরা জীবন বিপন্ন করে করোনা চিকিৎসায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন , নিজের সন্তানদের আদর যতেœর বাইরে রেখে করোনা আক্রান্ত লোকদের সেবা দিচ্ছেন , যে বাসায় থাকেন সেখানে একটা বিরুপ অবস্থা মোকাবেলা করছেন , করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ্য হয়ে আবার করোনা চিকিৎসায় মানুষের কাছে এসেছেন, কয়েকজন ডাক্তার মৃত্যু বরণও করেছেন। পুলিশ সদস্যরা আরো বিপদে আছে। তাদের কয়েকজন সদস্য জীবন দিয়েছেন। এই সব মানুষই করোনাযুদ্ধে আমাদের ফ্রন্ট ফাইটার। আমরা প্রার্থনা করবো ডাক্তার সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মীরা নিরাপদ থাকবেন। তারা নিরাপদ থাকলে আমরা নিরাপদ হবো। যারা গায়ের জোরে স্বাস্থ্য বিধি মানছেননা , সপরিবারে শপিং করতে বেরিয়েছেন , স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্তা না করে ব্যক্তিগত দুরত্ব বজায় রাখছেননা , করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে উদাসীনতা বা অতিরিক্ত স্মার্ট হয়েছেন , আল্লাহ না করুন আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত অসতর্কতার জন্য করোনা আক্রান্ত হন , তাহলে ঘটনাটা কি ঘটবে তাকি একবার ভেবে দেখেছেন ? আপনি করোনা আক্রান্ত হলে আপনাকে আইসোলেশনে রাখা হবে মানে চিকিৎসা সেবাদানকারী , পাড়া প্রতিবেশি , আত্মীয় স্বজন তো দুরের কথা আপনার প্রিয়জনেরাও আপনার সাথে সাক্ষাৎ করবেনা। হাসপাতালের আসোলেশন থেকে যদি না ফিরতে পারেন , তাহলে কেউ আপনার শেষ যাত্রায়ও শামিল হবেনা। ঐ যে করোনা নিয়ে একবার নিঃসঙ্গ অবস্থায় বেরুলেন আর কারো সাথে সাক্ষাৎ হবেনা। ঈদ পুজা বারবার আসবে , সারাজীবন শপিং করা যাবে। আগেতো বাঁচতে হবে। করোনা থেকে বাঁচার সুবিধা হলো করোনা নিজে থেকে আপনার কাছে আসবেনা যদি আপনি তাকে আমন্ত্রন না জানান। তাই শেষ কথা হলো নিজেদের ভালো নিজেদের বুঝতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব।


এধরনের আরও সংবাদ